
ছবি: সংগৃহীত
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নয়, আত্মবিশ্বাস আর অধ্যবসায়ই একজন মানুষকে পৌঁছে দেয় সাফল্যের শিখরে—এ কথা আবারও সত্য প্রমাণ করেছেন কুড়িগ্রামের মানিক রহমান। জন্ম থেকেই দুই হাত নেই, একটি পা অন্যটির তুলনায় খাটো। তবুও থেমে থাকেননি তিনি। জীবনযুদ্ধে নিজের প্রতিবন্ধকতাকে শক্তিতে রূপান্তর করে একের পর এক সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন।
সর্বশেষ তিনি পা দিয়ে লিখে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ‘বি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৯২তম স্থান অর্জন করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।
মানিক রহমান ২০২২ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায়ও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন তিনি।
ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রখানা গ্রামের ব্যবসায়ী মো. মিজানুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক মরিয়ম বেগমের বড় ছেলে মানিক। ছোট ভাই মাহীম নবম শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারের সদস্যরা কখনোই মানিককে প্রতিবন্ধী হিসেবে দেখেননি। বরং ছোটবেলা থেকেই তাকে পা দিয়ে লেখায় উৎসাহিত করেছেন। ফলে তার লেখাও হয়েছে সুন্দর ও স্পষ্ট। প্রযুক্তির সাথেও মানিকের দারুণ সখ্য। পা দিয়ে মোবাইল চালানো থেকে শুরু করে কম্পিউটারে টাইপিং পর্যন্ত সবকিছুতেই সে দক্ষতা অর্জন করেছে।
এই দক্ষতাকেই কাজে লাগিয়ে সে স্বপ্ন দেখেছে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। হাবিপ্রবিতে ‘বি’ ইউনিটে ভর্তির মাধ্যমে সেই স্বপ্ন পূরণের দরজা এখন খুলে গেছে।
মানিকের মা-বাবা বলেন, "শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও মানিক কখনো হাল ছাড়েনি। আমরা তাকে কখনো প্রতিবন্ধী মনে করিনি। আজকের এই সাফল্য আমাদের গর্বিত করেছে। সকলে তার জন্য দোয়া করবেন, যেন সে একজন ভালো মানুষ ও দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে।"
মানিক বলেন, “আমার দুটি হাত না থাকলেও আল্লাহর অশেষ রহমত, বাবা-মা ও শিক্ষকদের দোয়া এবং অনুপ্রেরণায় আমি পিইসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। এবার হাবিপ্রবির ‘বি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় ১৯২তম হয়েছি। আমি চাই একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের সেবা করতে।”
মানিকের এই পথচলা যেন প্রেরণা হয় দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য, যারা কোনো না কোনো কারণে হাল ছেড়ে দিতে চায়। মানিক তাদের দেখিয়ে দিয়েছেন—ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, আর সংকল্প থাকলে স্বপ্নও ধরা দেয়।
আলীম