
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
বর্তমান সময়ে, যখন শিক্ষার খরচ দিনদিন আকাশচুম্বী, তখন রাজবাড়ীতে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে একটি ক্ষুদ্র কিন্তু সাহসী উদ্যোগ—ব্রাইট ফিউচার একাডেমি। যেখানে অন্যান্য কোচিং সেন্টারগুলো মাসে ২০০০-৩০০০ টাকা ফি নেয়, সেখানে এই প্রতিষ্ঠান মাত্র ২৫০ টাকায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদান করছে।
২০২৫ সালের ২ মে যাত্রা শুরু করা এই একাডেমি ইতোমধ্যে রাজবাড়ী শহরের শিক্ষানুরাগী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে এখানে ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠ নিচ্ছে এই নামমাত্র ফি-তে।
এই মহৎ উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন রাকিবুল ইসলাম মানবিক উদ্যোক্তা, যার জীবনের গল্পই এই একাডেমির ভিত্তি। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের কষ্টার্জিত আয় দিয়ে বেড়ে ওঠা রাকিবুল ইসলাম নিজের স্কুলজীবনে বুঝতে পারেন—শিক্ষার খরচ গরিব পরিবারের জন্য কতটা কঠিন বাস্তবতা। ক্লাস নাইনে উঠে যখন তাঁর প্রাইভেট পড়ার খরচ ছিল মাসে প্রায় ৩০০০ টাকা, তখনই মনে জাগে এক প্রশ্ন—“শিক্ষার জন্য এত টাকা কেন লাগবে?”
এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নেয় স্বপ্ন—একটি এমন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, যেখানে সবার জন্য শিক্ষা থাকবে সুলভ ও সহজলভ্য। শুরুটা সহজ ছিল না। আশেপাশের অনেকে হাসাহাসি করত, বলত এটা অসম্ভব। কিন্তু রাকিব থেমে যাননি। মা ও একজন প্রিয় স্যারের সমর্থন আর কিছু বিশ্বস্ত বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোয় অবশেষে স্বপ্ন রূপ নেয় বাস্তবে।
ব্রাইট ফিউচার একাডেমির মূল লক্ষ্য—দরিদ্র, মেধাবী ও শিক্ষা-বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো। ভবিষ্যতে এই একাডেমি শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষায় সীমাবদ্ধ না থেকে কারিগরি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করতে চায়।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, “মানুষের হাসিমুখ, তাদের সন্তানের অগ্রগতি দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষা শুধুমাত্র ধনীদের একচেটিয়া অধিকার নয়—এটা সবার।”
রাজবাড়ীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এই ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেকের জন্য আশার আলো। ‘ব্রাইট ফিউচার একাডেমি’ প্রমাণ করছে—স্বপ্ন, ইচ্ছাশক্তি ও নিষ্ঠা থাকলে অল্প খরচেও শিক্ষার দীপ্ত আলো ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
নোভা