ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চাঁদনী উচ্চতায় ছোট, স্বপ্ন বড়: সহযোগিতা চান দরিদ্র বাবা-মা

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২২ মে ২০২৫; আপডেট: ১১:৪৩, ২২ মে ২০২৫

চাঁদনী উচ্চতায় ছোট, স্বপ্ন বড়: সহযোগিতা চান দরিদ্র বাবা-মা

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী চাঁদনী খাতুন (১৪) এর উচ্চতা দুই ফিট আট ইঞ্চি। নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়েও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক জীবন না হলেও পড়াশুনা করে ভালো চাকুরি করার স্বপ্ন দেখে। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবা-মা সব সময় চিন্তা করে। মেয়ের ভবিষ্যৎ কি হবে জানেনা। তবে তাকে স্বপ্ন দেখায় বড় হওয়ার। তার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।                                 

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জ্যোতিন্দ্র নারায়ণ গ্রামে চাঁদনী খাতুনের বাড়ি। মিয়া পাড়া নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। চাঁদনীর উচ্চতা দুই ফিট ৮ ইঞ্চি। 

বাবা চাঁদমিয়া দিনমজুর, মা রত্না বেগম। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। পড়াশুনায় মোটামুটি ভালো। ছোট বেলা থেকে নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল সে। চিকিৎসা করার সামর্থ্য না থাকায় আর অপুষ্টির কারণে তার বাড়ন্ত কমে যায়। একসময় সুস্থ হলেও তার উচ্চতা আশানুরূপ হয়নি। এক সময় তাদের সংসারে সচ্ছলতা থাকলেও বার বার ধরলার ভাঙ্গনের কারণে নিঃস্ব হয়েছে পুরো পরিবার। প্রতিবন্ধী হিসেবে স্থানীয় ভাবে স্কুলে ও ইউনিয়ন পরিষদে আলাদা কোন সুযোগ সুবিধা না পেলে দুই বছর আগে স্থানীয় মেম্বারের সহায়তায় একটি মাত্র প্রতিবন্ধী কার্ড পেয়েছে।  

দাদি চায়না খাতুন ও এলাকাবাসী জানায়, “তারা জানান চাঁদনীর জন্য তার বাবা-মা সব সময় দুশ্চিন্তা করে। চাঁদনী বয়সের চেয়ে অনেক কম বয়সি মেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে। চাঁদনী স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ আছে বলে সে প্রতিদিন স্কুলে যায়। আমরা চাই চাঁদনী পড়ালেখা করে অন্তত নিজের জীবনটা যেন চালাতে পারে। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।” 

সহপাঠী মনীষা জানায়, “চাঁদনীকে প্রতিদিন আমার সাইকেলে করে স্কুল নিয়ে যাই। কোন কারণে আমি যদি স্কুলে না যাই তাহলে চাঁদনীর স্কুল যাওয়া হয় না। আমাকে ছাড়া চাঁদনী কখনও স্কুলে যায় না। আমার কোন কারণে সমস্যা হলে তার মা অথবা তার বাবা যদি স্কুলে নিয়ে যায় সেই দিন তার মনটা খারাপ থাকে। সে খুব ভালো বান্ধবী আমার।” 

শিক্ষার্থী চাঁদনী খাতুন জানায়, “স্কুলের বন্ধু বান্ধবীরা আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে। বাবার দিন মজুরির আয়ে আমাদের সংসার চলে। স্কুলের উপবৃত্তি ও আমার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার একটু কষ্ট হলেও চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।” 

বাবা-মা চাঁদ মিয়া ও রত্না বেগম জানায়, “চাঁদনী জন্মের সময় সুস্থ সবল ছিল। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা গরীব মানুষ সাধ্য মত তার চিকিৎসা করাতে পারিনি।  প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তার সমস্ত কাজ করে দিতে হয়। আমাদের নুন আনতে পানতা ফুরায় সেখানে কীভাবে তার চিকিৎসা করাবো। অপরিচিত কেউ আসলেই ভয়ে কথা বলতে পারে না। আমরা যখন থাকবো না জানি না তার জীবনে কি হবে। একমাত্র আল্লাহ ভরসা।”

শিমুলবাড়ী মিয়াপাড়া নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জানান, “চাঁদনীর উচ্চতা ২ ফিট ৮ ইঞ্চি। তার বাবা খুবই দরিদ্র বাকী সব শিক্ষার্থীর চেয়ে সে ভিন্ন প্রকৃতির। সে স্কুলে নিয়মিত আসে এবং পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ আছে। সে নিয়মিত উপবৃত্তি পাচ্ছে। চাঁদনীকে আরও কিছু সহায়তা করা গেলে তার বাবার জন্য ভালো হতো। আমরা চাই চাঁদনী পড়ালেখা করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।”

মিরাজ খান

×