
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল বিশ্বের অন্যতম উচ্চগতির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানি পরিচালিত এই সেবা চালু হওয়ার মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল অবকাঠামোয় নতুন এক যুগের সূচনা হলো। বিশেষ করে যেখানে ফাইবার অপটিক বা মোবাইল নেটওয়ার্ক সহজলভ্য নয়, সেই প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও এখন থেকে উচ্চগতির ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া সম্ভব হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ই-কমার্স এবং অন্যান্য ডিজিটাল সেবার প্রসারে এটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্টারলিংক সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়া
স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা পেতে আগ্রহীদের www.starlink.com ওয়েবসাইটে গিয়ে 'রেসিডেনশিয়াল' অপশন থেকে 'অর্ডার নাউ' বাটনে ক্লিক করে নিজের অবস্থান নির্বাচন করতে হবে। বর্তমানে 'রোম' বা ভ্রাম্যমাণ সেবার অনুমোদন বাংলাদেশ সরকার দেয়নি। অর্ডার সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান ও অর্থ পরিশোধের পর 'প্লেস অর্ডার' বাটনে ক্লিক করতে হবে। তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সরঞ্জাম গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে, যা সহজেই নিজে সেটআপ করা সম্ভব।
খরচ ও প্যাকেজ বিবরণ
স্টারলিংকের সেবা গ্রহণে এককালীন সরঞ্জাম খরচ ৪৭,০০০ টাকা। মাসিক প্যাকেজ হিসেবে 'রেসিডেন্স' প্যাকেজের খরচ ৬,০০০ টাকা এবং 'রেসিডেন্স লাইট' প্যাকেজের খরচ ৪,২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে রিসিভার বা অ্যান্টেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার এবং পাওয়ার সাপ্লাই।
সেবা ভাগাভাগি ও পরিসর
একটি ডিভাইস থেকে ২০ থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে, যা গ্রামীণ এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। একজন ব্যক্তি বা সমিতি আকারে একাধিক ব্যক্তি মিলে এই সেবা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারবেন।
সরকারের উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় স্টারলিংক দ্রুত অনুমোদন পেয়েছে। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, গত বছর ইন্টারনেট সংযোগে বিঘ্ন ঘটায় বিনিয়োগে ক্ষতি হয়েছিল। উচ্চগতির ও মানসম্মত ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে স্টারলিংককে দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কায় স্টারলিংক সেবা চালু হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বিদেশি গেটওয়ে ব্যবহার করে ৯০ দিনের জন্য পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। ভবিষ্যতে স্থানীয় গেটওয়ে স্থাপন করে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত দিক
স্টারলিংক সেবা সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস গতিতে আনলিমিটেড ইন্টারনেট প্রদান করবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ফাইবার অপটিক সংযোগ পৌঁছায় না, সেখানে স্টারলিংক সহজেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে পারবে। সরকারের মতে, দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার ফাইবার সংযুক্ত; বাকিগুলো মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যার সক্ষমতা কম। স্টারলিংক এই সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
এছাড়াও, অ্যামাজন কুইপার, টেলিসেট, স্যাটেলয়েট ও ওয়ান ওয়েবসহ অন্যান্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সেবা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার জানিয়েছে, আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো স্টারলিংকের মতোই নীতিগত সুবিধা পাবে।
বাংলাদেশে স্টারলিংকের বাণিজ্যিক সেবা চালু হওয়ায় দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আলীম