
আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন শিক্ষক থাকতে হবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এ মানদণ্ড অনুসরণের জন্য উৎসাহ দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
তবে এ মানদণ্ডের ধারে কাছেও নেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ফার্মেসি বিভাগ। ফার্মেসি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ৭ ব্যাচে ২৫০ শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৫ জন। প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক মাত্র ১ জন। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক কম হওয়ায় চাপ পড়ছে বর্তমান শিক্ষকদের উপর। ক্লাস, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশে হিমশিম খেতে হয় শিক্ষকদের। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের একাডেমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগের ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭ জন শিক্ষক পিএইচডিসহ বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রির জন্য শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। বর্তমানে ২ জন সহযোগী অধ্যাপক, ২ জন সহকারী অধ্যাপক ও ১ জন প্রভাষক রয়েছেন।
অনুসন্ধানে শিক্ষক সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি গ্রহণের অধিকার রয়েছে। পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ছুটির বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা ছিল না। তবে বর্তমান প্রশাসন সম্প্রতি একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যেখানে বলা হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে যেতে পারবেন। সে অনুযায়ী ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬ জন যেতে পারেন এবং বাকি ৬ জন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনায় থাকবেন। সেই হিসেবে, বর্তমানে একজন অতিরিক্ত শিক্ষক ছুটিতে রয়েছেন।
শিক্ষক সংকট নিয়ে বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, "আমাদের পাঁচ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হওয়ায় কার্যত ক্লাস নিচ্ছেন মাত্র ৪ জন শিক্ষক। ফলে প্রতিটি ব্যাচে একজন শিক্ষকের ওপর দুটি করে কোর্স পড়ানোর চাপ পড়ছে। এই সংকটের কারণে আমরা সেশনজটে পড়ছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, যেন দ্রুত আমাদের বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।"
শিক্ষক সংকট নিয়ে বিভাগীয় প্রধান ড. প্রদীপ দেবনাথ বলেন, "শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় আমরা মাস্টার্স প্রোগ্রামের পাঁচটি কোর্সের মধ্যে তিনটিতে এই বছর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পার্ট-টাইম শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। ভবিষ্যতে যদি আরও শিক্ষকের প্রয়োজন হয়, তবে একাডেমিক মিটিংয়ের মাধ্যমে তা নির্ধারণ করে নিয়োগ দেওয়া হবে।"
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম হচ্ছে মোট শিক্ষকের ৫০ শতাংশের অধিক ছুটি দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমি এসে দেখি ফার্মেসি বিভাগে পাঁচ জন শিক্ষক, অন্যরা ছুটিতে আছেন। আমি দ্রুত চেষ্টা করছি এটা সমাধান করতে। আমি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ অল্প সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে ডিপার্টমেন্ট চলে না। নতুন পদ সৃষ্টি অথবা শিক্ষা ছুটির বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে ইউজিসিকে অনুরোধ করেছি। ইউজিসির অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করব।"
রিফাত