
ছবি: সংগৃহীত
কারাগার সাধারণত অপরাধীদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা। কিন্তু মধ্য আমেরিকার ছোট দেশ এল সালভাদরে রয়েছে এমন একটি কারাগার, যেখানে একবার প্রবেশ করলে আর মুক্তি নেই—মৃত্যুই সেখানে একমাত্র পরিণতি।
চারদিক ঘিরে নির্জন এলাকা, জনমানবহীন বিস্তৃত ভূমি। এমন এক প্রেক্ষাপটে ৪১০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম কুখ্যাত এই কারাগার—‘সেন্টার ফর দ্য কনফাইনমেন্ট অব টেরোরিজম’ বা সংক্ষেপে সিকট (Centro de Confinamiento del Terrorismo (CECOT))।
প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলের নির্দেশে ২০২৩ সালে চালু হওয়া এই কারাগারটি গ্যাং কালচারে জর্জরিত এল সালভাদরে অপরাধীদের দমন করতেই তৈরি করা হয়েছে। একবার এই বন্দিশালায় প্রবেশ করলে মৃত্যু ছাড়া আর কোন মুক্তির আশা রাখা নিষেধ।
কারাগারটিতে রয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা দেয়াল। কারও প্রবেশে প্রয়োজন হয় বিশেষ অনুমতির। বন্দীদের নিয়ন্ত্রণে মোতায়ন করা হয়েছে প্রায় হাজারো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
১৯৮০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে বিপর্যস্ত এল সালভাদর। সে সময় বহু মানুষ দারিদ্র্য ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে পাড়ি জমায় যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু সেখানকার সমাজে তারা গড়ে তোলে গ্যাং-ভিত্তিক অপরাধচক্র। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া এসব অপরাধীকে ফেরত পাঠানো হয় এল সালভাদরে। এবং এদের অনেককেই রাখা হয় সিকট কারাগারে।
দেশটির রাজধানী সান সালভাদর থেকে গাড়িতে প্রায় ৯০ মিনিটের পথ এই কারাগারে প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার বন্দি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি নেই তাদের পরিবারের সদস্যদেরও। বিচার কার্যক্রম হয় অনলাইনে, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পুরো কারাগারের এক মাইলের বেশি এলাকায় মোবাইল ফোনের সিগনাল ব্লক করে রাখা হয়েছে। কাটাতারে মোড়া এই কারাগারে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে সর্বত্র।
বন্দিদের প্রতিদিন মাত্র আধাঘণ্টার জন্য সেল থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা ধরে সেলের ভেতরে আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়। নেই আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থাও; প্রতিটি সেলে রয়েছে দুটি উন্মুক্ত টয়লেট, যা ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয় বন্দিদের।
এমন কঠোর শর্তে পরিচালিত এই কারাগার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার দেশের অপরাধী ও অভিবাসীদের এই সিকট কারাগারে পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এল সালভাদর প্রেসিডেন্ট বুকেলেও এতে সম্মতি জানিয়েছেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্রে জানা গেছে।
রাকিব