
ছবি: সংগৃহীত
গাছে গাছে ঝুলছে নানা রঙের, নানা আকারের বিদেশি জাতের আম। একেকটি যেন একেক দেশের পরিচয় বহন করে। চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহতলী গ্রামের ‘ফ্রুটস ভ্যালি এগ্রো ফার্মে’ ঢুকলেই চোখে পড়ে এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এখানেই গড়ে উঠেছে ৫৭ জাতের বিদেশি আমের বাগান—বাংলাদেশে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
ফার্মটির উদ্যোক্তা হেলালউদ্দিন। সৌখিনতাকে পুঁজি করে মাত্র চার বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন এই বাগান। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে প্রায় ২৫০টি আমগাছ, যার সবগুলোই বিদেশি জাতের।
এক বাগানে বিশ্বখ্যাত সব আমের জাত
এই বাগানে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নামি-দামি আমের জাত:
ভ্যালেন্সিয়া প্রাইড, লেমনজেস্ট, বেইলি মার্বেল, রোজা রোজা, সানসেট, আতাউলফ, কারাবাউ, আলফানসো, ক্লেইম, হাডেন, মায়া, সেনসেশন, অস্টিন গোল্ড, মিয়াজাকি—নাম শুনলেই বোঝা যায় এরা কতটা দুর্লভ এবং উচ্চমূল্যের ফল।
উল্লেখযোগ্য একটি জাত হলো ‘ভাই গোল্ডেন’। এটি কাঁচা অবস্থায়ই হলুদ রঙ ধারণ করে, দেখতে একদম পাকা আমের মতো। অত্যন্ত সুস্বাদু এই আম ‘বিশ্বের অন্যতম সেরা মিষ্টি আম’ হিসেবে পরিচিত।
চারা সংগ্রহ থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন
হেলালউদ্দিন জানান, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমের চারা এবং কলম সংগ্রহ করে আমরা ধীরে ধীরে এই বাগান গড়ে তুলেছি। বর্তমানে বাগানের প্রায় সব গাছেই ফল এসেছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ফল পাকতে শুরু করবে। আগস্টে হবে প্রধান হারভেস্ট।’
গত বছর বাগান থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকার আম বিক্রি হয়। এবার তার টার্গেট ৮ লাখ টাকা। বর্তমানে ১০-১২ জন কর্মী নিয়মিত কাজ করেন এই বাগানে।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আগ্রহ
হেলালউদ্দিনের কাছ থেকে চারা নিয়ে এখন অনেকেই নিজস্বভাবে আমবাগান করছেন। তার প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে চাঁদপুরের এই মাটি থেকেই ছড়িয়ে পড়বে বিদেশি জাতের আম বাংলাদেশের নানা প্রান্তে।
তিনি বলেন, ‘কখনো ভাবিনি চাঁদপুর বা কুমিল্লার মাটিতে এত সুন্দরভাবে এই আমের ফলন হবে। এখন আশাবাদী, যেহেতু এগুলো উচ্চমূল্যের ও লেট ভ্যারাইটির আম—যেকোনো উদ্যোক্তা এগুলো চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।’
শুধু আম নয়, আরও ১৩২ প্রজাতির ফল!
এই বাগানে শুধু আম নয়, রয়েছে আরও বিস্ময়।
- ১৭ জাতের কমলা
- ২১ প্রজাতির আঙ্গুর
- ১২ প্রজাতির লংগান ফল
- ৪৪ প্রজাতির রামবুতান
- ৩৭ প্রজাতির অন্যান্য ফল
সব মিলিয়ে প্রায় ১৩২ প্রজাতির ফল গাছ রয়েছে এই ফার্মে।
হেলালউদ্দিনের এই ফার্ম এখন শুধু চাঁদপুর নয়, দেশের কৃষি খাতে এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা। এই উদ্যোগ প্রমাণ করে—উদ্যোগ আর উদ্ভাবন থাকলে বাংলাদেশের মাটিতে সম্ভব বিশ্বমানের চাষাবাদ।
সূত্র: প্রথম আলো।
রাকিব