ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাবনার ক্যালিকো কটন মিল বিধ্বস্ত পুরাকীর্তিতে পরিণত হয়েছে 

হৃদয় হোসাইন,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২২ মে ২০২৫

পাবনার ক্যালিকো কটন মিল বিধ্বস্ত পুরাকীর্তিতে পরিণত হয়েছে 

পাবনা সদর উপজেলার রাজাপুরে ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ক্যালিকো কটন মিল। মিলটি এখন ধ্বংস স্তূপ। মামলা সংক্রান্ত আইনি জটিলতায় ১৯৯৩ সালে বন্ধ হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় চালু করা কিংবা জমির ব্যবহার সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারছে না মালিকপক্ষ। ৭০ ও ৮০ দশকের জমজমাট মিলটি এখন যেন এক বিধ্বস্ত পুরাকীর্তি। 

পাবনা শহরে প্রবেশের মুখেই চোখে পড়বে দৃশ্যটি। সবুজ ঘাসে ছেয়ে থাকা ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক সংলগ্ন বিশাল মাঠের মধ্যে মাথা তুলে আছে কয়েকটি ভাঙা ইটের দেয়াল আর কংক্রিটের খুঁটি। ওপরের দিকে খাঁজকাটা আকৃতি দেখে বোঝা যায়, কোনো একটি কারখানা ছিল এককালে। মিলটি চালুর ব্যাপারে মন্ত্রী-এমপিসহ জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া কোনও প্রতিশ্রুতিই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। প্রায় ৩২ বছর ধরে বন্ধ দেশের বৃহত্তম সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পাবনার ক্যালিকো কটন মিল। 

সময়ের বিবর্তনে অযত্ন অবহেলায় কারখানার ভবণসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি এখন ধ্বংস স্তূপ হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। এখানকার সুতা দেশের চাহিদা মিটিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। লাভজনক হওয়ায় ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ সম্ভাবনাময় এই ক্যালিকো কটন মিলকে জাতীয়করণ করে। সরকার এর পরিচালনার দ্বায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনকে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত হওয়া মাত্র ১১ বছরে ২ কোটি ৮৭ লক্ষ ২ হাজার ৫৭০ টাকা ব্যাংক ঋণসহ লোকসানে চলে যায় প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে ১৯৮৩ সালে মিলটি প্রতিষ্ঠাকালীন মালিক পক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন। তারপর থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এই শিল্প প্রতিষ্ঠান। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষতায় পরিচালিত বৃহৎ এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের এতবড় লোকসানের কারণ এখনও অজানা। 

বৃহত্তর পাবনা-সিরাজগঞ্জের সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী ইলিয়াস আলী ও তার ৮ জন নিকট আত্মীয় মিলে ৩৬ দশমিক ৭২ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠা করেন ক্যালিকো কটন মিল। ১৯৬৭ সালে নিবন্ধিত এই প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যায় ১৯৬৮ সালের ১১ নভেম্বর। কারখানায় ৪৮০ জন নিয়মিত শ্রমিকসহ প্রায় ৭'শ জন শ্রমিক কাজ করতেন। কারখানা ভবন ছাড়াও তুলা ও সুতা রাখার গুদাম, প্রশাসনিক ভবন,কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের পৃথক আবাসিক ভবন,মসজিদ,ডাকঘর,স্কুল,শহীদ মিনার  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মালিক পক্ষ। এসব কিছু এখন পরিত্যক্ত। জানা যায়,অগ্রণী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধক চলে যায় অগ্রণী ব্যাংক আব্দুল হামিদ রোড শাখার নিকট। পুনরায় মিলের মালিকানা পেয়ে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েও আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি মালিক পক্ষ। সেই সাথে মালিকদের মধ্যাকার অভ্যান্তরীণ কোন্দল ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ১৯৯৩ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয় এই কটন মিল। কারখানার উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর সুদে-আসলে ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা দাবি করে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করে ব্যাংক। এমতাবস্থায়  মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি রক্ষনাবেক্ষণের কাজে ০৭জন আনসার সদস্য নিয়োগ করে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। 

বর্তমানে প্রধান ফটকসহ মিলের সর্বত্র আগাছা আর জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে গাড়িসহ মূল্যবান সব মেশিন আর যন্ত্রাংশ। মিলের ভেতর থেকে চুরি হয়ে গেছে ইট, কাঠ লোহা থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।মাঝে মধ্যে পরিত্যক্ত ভবণ গুলোতে সন্ধ্যা হলেই বসে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের আসর। বিকেলে স্থানীয় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেরা বন্ধুদের সাথে নিয়ে মিলের মাঠে খেলাধুলা করে।

নোভা

×