
ছবি: সংগৃহীত
দূর থেকে দেখলে যে কেউ ভাবতে পারেন এটি একটি পুরনো বটগাছ। বিশাল আকৃতি, ডালপালা মাটিতে নুয়ে পড়া, তিনদিক থেকে ছড়িয়ে থাকা শাখা—সব মিলিয়ে যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়। তবে চমক এখানেই যে, এটি আসলে একটি সূর্যপুরি জাতের আমগাছ!
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মুন্ডুমালা গ্রামে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক গাছটি এখন শুধু স্থানীয়দের নয়, দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরও কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।
গাছ না বিস্ময়?
গাছটির সঠিক বয়স আজও রহস্য। কারও মতে ১৫০ বছর, কেউ বলেন ২৫০। আবার স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্য, এটি হতে পারে তিন শতাব্দী পুরোনো! গাছটির উচ্চতা প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট এবং এটি ছড়িয়েছে দুই বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে।
গাছের গঠন এমনই যে তার ১৯টি মোটা শাখা তিনদিকে মাটিতে নুয়ে পড়েছে, ঠিক যেন কোনো অক্টোপাস তার বাহু ছড়িয়ে বসে আছে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও গাছটির প্রাণ এখনো অটুট—শীর্ষভাগে এখনো ভরপুর সবুজ পাতা ও ফল।
ফলন ও খ্যাতি
এ বছরও গাছে ফল এসেছে। প্রতিটি আমের ওজন ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম। প্রতিবছর এই গাছ থেকে পাওয়া যায় ১২০ থেকে ১৫০ মণ আম। সূর্যপুরি আমের খ্যাতি এমনিতেই আছে, তবে এই গাছের আম যেন আরও বিশেষ কিছু—স্বাদে অতুলনীয়, দেখতে মনোমুগ্ধকর। ফলে বাজারেও এর চাহিদা ও দাম সাধারণ আমের তুলনায় বেশি।
সূর্যপুরি আমের ঐতিহাসিক শিকড়
ধারণা করা হয়, এই জাতের সূর্যপুরি আম এসেছে তৎকালীন ভারতবর্ষের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার সূর্যপুর এলাকা থেকে। প্রায় ৩০০ বছর আগে এই আমের চারা বা বীজ কোনো এক আম যাত্রীর হাত ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছিল। এখন এই গাছটি সেই ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী।
পর্যটন আকর্ষণ ও সংরক্ষণ
গাছটি এখন একটি স্থানীয় পর্যটন আকর্ষণ। প্রতিদিনই অনেক দর্শনার্থী আসেন এই গাছ দেখতে। গাছটির চারপাশে দেওয়া হয়েছে বেড়া। কাছ থেকে দেখতে হলে লাগছে প্রবেশ টিকিট।
বর্তমানে গাছটির মালিকানায় রয়েছে দুই ভাই—সাইদুল ইসলাম ও নুর ইসলাম। তারা এটি পেয়েছেন পৈতৃক সূত্রে। গাছটির রক্ষণাবেক্ষণে বর্তমানে প্রায় ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন।
মুন্ডুমালার এই সূর্যপুরি আমগাছ শুধু একটি বৃক্ষ নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিস্ময় আর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতীক। প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থানে গড়া এই নিদর্শন ভবিষ্যতে আরও বড় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে—যদি এর যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রচার চালানো হয়।
সূত্র: প্রথম আলো।
রাকিব