
ছবিঃ সংগৃহীত
একটি শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনার পরিবর্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মুখোমুখি হয়ে দাবি করেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের হত্যা ও নিপীড়ন করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ৫৯ জন আফ্রিকানারকে শরণার্থী মর্যাদা দেওয়ার পর সম্পর্ক পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে রামাফোসা হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যান। কিন্তু বৈঠকের সময় ট্রাম্প এক ভিডিও উপস্থাপন করেন যেখানে গণহত্যার দৃশ্য দেখা যায় — তিনি দাবি করেন এগুলো শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের কবর।
ভিডিওতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরোধী নেতা জুলিয়াস মালেমার একটি বিতর্কিত গান বাজানো হয়: “শুট দ্য বুর, শুট দ্য ফার্মার।” এরপর ট্রাম্প অভিযোগ করেন, “আপনারা জমি কেড়ে নেন, এরপর কৃষকদের হত্যা করেন, আর তাদের হত্যাকারীদের কিছুই হয় না।”
তিনি বলেন, "আমাদের দেশে অপরাধ আছে, কিন্তু নিহতদের অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ। এটি শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গদের সমস্যা নয়।" তিনি আরও জানান, ভিডিওতে দেখানো বক্তব্য সরকারী নীতি নয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বহু দলীয় গণতন্ত্রের আওতায় এমন মত প্রকাশ সম্ভব।
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি বাজেয়াপ্তকরণ নীতির মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে, যদিও রামাফোসা সরকার জানিয়েছে যে এখনো কেউ এই নতুন আইনের আওতায় জমি হারায়নি।
রামাফোসা বলেন, “যদি গণহত্যা সত্য হতো, তাহলে আমার সঙ্গে থাকা শ্বেতাঙ্গ প্রতিনিধি — আর্নি এলস, রেটিফ গুসেন এবং ধনী ব্যবসায়ী ইয়োহান রুপার্ট — এরা এখানে থাকতেন না।” তিনি ট্রাম্পকে শান্ত করতে একজন শ্বেতাঙ্গ কৃষিমন্ত্রী জন স্টিনহুইসেনকেও কথা বলার আহ্বান জানান।
এদিকে বিরোধী নেতা মালেমা এই বৈঠক নিয়ে উপহাস করে বলেন, “ওয়াশিংটনে কিছু বয়স্ক মানুষ জড়ো হয়ে আমার নিয়ে গসিপ করছে।”
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত হেলেনা হামফ্রে এই বৈঠককে “অত্যন্ত বিব্রতকর” বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, “এটি স্পষ্ট ছিল যে, রামাফোসাকে অপমান করা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করাই ছিল উদ্দেশ্য।”
ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য স্থগিত করেছে এবং আফ্রিকানার সম্প্রদায়কে মার্কিন শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী আফ্রিকানার সংগঠন ‘আফ্রিফোরাম’-এর প্রধান ক্যালি ক্রিয়েল বিবিসিকে বলেন, “ভিডিওটি বাস্তব সমস্যাগুলো তুলে ধরেছে, অস্বীকার করার সুযোগ নেই।”
বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় অপরাধ হার উঁচু হলেও সরকার জাতিগত ভিত্তিতে অপরাধের তথ্য প্রকাশ করে না। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে দেশটিতে প্রায় ১০,০০০ খুন হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ১২টি ঘটেছে খামার এলাকায় এবং মাত্র একজন কৃষক নিহত হয়েছেন। অধিকাংশ নিহতই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ খামারকর্মী বা বাসিন্দা।
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার দাবি করে, তারা নেলসন ম্যান্ডেলার আদর্শে বিশ্বাসী এবং বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণের পথেই অগ্রসর হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের মন্তব্য ও ভিডিও উপস্থাপন এ কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন করে উত্তেজনার মুখে ফেলেছে।
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা