ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিদেশ থেকে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করতে চান? আইনি পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২২ মে ২০২৫

বিদেশ থেকে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করতে চান? আইনি পরামর্শ

ছবি: প্রতীকী

জীবন ও জীবিকার তাগিদে বহু বাংলাদেশি প্রবাসে থাকেন। দেশের স্থাবর সম্পত্তি কেনা-বিক্রয় নিয়ে তাদের মধ্যে অনেকেই আগ্রহী থাকলেও প্রবাস থেকে জমি ক্রয় এখন আগের মতো সহজ নয়। ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হওয়ায় ক্রেতা-ও বিক্রেতা উভয়ের উপস্থিতি এবং স্বাক্ষর বা আঙুলের ছাপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই প্রবাস থেকে জমি কেনা এখন অনেকটাই কঠিন।

তবে প্রবাসে থাকলেও দেশের জমি বিক্রয় বা অন্যান্য সম্পত্তি লেনদেনের প্রয়োজন পড়তে পারে। অনেক সময় জমি বা সম্পত্তি বিক্রয় একটি অংশীদারের অনুপস্থিতিতে বিলম্বিত হয়। তবে আইনগত কিছু কৌশল ও পাওয়ার অফ এটর্নি (অমতারনামা) ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।

পাওয়ার অফ এটর্নি: তিন ধরনের

১. অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অফ এটর্নি: স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়, বন্ধক দেওয়া, দলিল সম্পাদনার ক্ষমতা দেয়।

২. সাধারণ পাওয়ার অফ এটর্নি: অপ্রত্যাহারযোগ্য ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের জন্য।

৩. বিশেষ পাওয়ার অফ এটর্নি: নির্দিষ্ট একটি কাজের জন্য ক্ষমতা প্রদান।

পাওয়ার অফ এটর্নি দলিল তৈরির প্রক্রিয়া

প্রথমে প্রবাসে থাকা পাওয়ারদাতা দেশে আইনজীবীর সাহায্যে দলিল প্রস্তুত করান। পাওয়ারগ্রহীতার কপি ছবি, এনআইডি ইত্যাদি একসাথে কুরিয়ার বা ডাকযোগে দেশে পাঠানো হয়। এরপর পাওয়ারদাতা বাংলাদেশ দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে দলিল স্বাক্ষর করেন, যা কাউন্সিলরের মাধ্যমে সত্যায়িত হয়। দলিলটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচাইয়ের পর ডিসি অফিসে স্ট্যাম্পিং করা হয় এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধন করা হয়। এই প্রক্রিয়া শেষে পাওয়ারগ্রহীতা সম্পত্তি বিক্রয়সহ সকল লেনদেনের ক্ষমতা পান।

অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অফ এটর্নির বৈধতা ও বাতিলের পদ্ধতি

আইন অনুযায়ী অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অফ এটর্নি মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত বাতিল করা যায় না। মেয়াদ উত্তীর্ণের পরেও তা কার্যকর থাকে। পাওয়ারদাতা বা পাওয়ারগ্রহীতার মৃত্যু হলে দলিলের অধিকার ও দায় বৈধ উত্তরাধিকারীদের ওপর অর্পিত হয়। বাতিলের জন্য দলিলে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ, উভয় পক্ষের সম্মতি বা আদালতের মাধ্যমে যথাযথ কারণ প্রমাণের প্রয়োজন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক দিক

  • ফরেন পাওয়ার অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।
  • অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার থাকলেও কেউ সম্পত্তি নিজের নামে নামজারি করতে পারে না।
  • পাওয়ার দেওয়ার সময় বিশ্বস্ত ব্যক্তি নির্বাচন করা জরুরি এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
  • অনিয়ম বা প্রতারণার ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলা করা যায়।

বিদেশ থেকে স্থাবর সম্পত্তি কেনা-বিক্রয়ের সময় এই আইনি দিকগুলো জানা থাকলে প্রবাসীরা নিরাপদে তাদের সম্পত্তি লেনদেন করতে পারবেন এবং প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=Fmo7IPc0Xws

রাকিব

×