
ছবি: প্রতীকী
জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। অনেক সময় দেখা যায়, একই জমির ওপর দুই ব্যক্তি মালিকানা দাবি করছেন— একজন দলিল দেখিয়ে, আরেকজন রেকর্ডের (খতিয়ান) ভিত্তিতে। তাহলে প্রকৃত মালিক কে? আর কে সেই ব্যক্তি যার আইনগত অধিকার রয়েছে জমি বিক্রি করার?
সম্প্রতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া আঞ্জুম এক ভিডিও আলোচনায় এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে জমির মালিকানা নির্ধারণে দলিল ও রেকর্ড— উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এগুলোর ধারাবাহিকতা ও সামঞ্জস্য না থাকলে জটিলতা দেখা দেয়।
দলিল বনাম রেকর্ড: কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
জমির দলিল হলো বিক্রয় বা হস্তান্তরের প্রমাণ, যা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে নিবন্ধিত হয়। অন্যদিকে রেকর্ড বা খতিয়ান হলো সরকারি হিসাব অনুযায়ী জমির দখলের বিবরণ। শুধু রেকর্ড বা শুধু দলিল— কোনোটাই এককভাবে মালিকানা নিশ্চিত করে না, যদি না সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নথির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।
ব্যারিস্টার তাসমিয়া একটি বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেন—
কফিল উদ্দিন ওয়ারিশ সূত্রে ঢাকার একটি জমির মালিক হন। পরে দলিলের মাধ্যমে তা বিক্রি করেন আমিন উদ্দিনকে, যিনি দলিল রেজিস্ট্রেশন করলেও নামজারি করেননি। পরবর্তীতে, ঢাকার সিটি জরিপে প্রতিবেশী শরীফ উদ্দিন নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন এবং মালিকানা দাবি করতে থাকেন।
এখানে শরীফ উদ্দিনের দাবি শুধুমাত্র রেকর্ডের ভিত্তিতে, কিন্তু আমিন উদ্দিনের আছে বৈধ দলিল এবং পূর্ববর্তী সব খতিয়ানের মালিকানা ধারাবাহিকতা। কাজেই, আইন অনুযায়ী প্রকৃত মালিক হলেন আমিন উদ্দিন।
সমাধানের পথ কী?
- যদি জমির রেকর্ড অন্যের নামে হয়ে যায়, তবে প্রথমে সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিসে আবেদন করে রেকর্ড সংশোধন চাওয়া যায়।
- যদি সংশোধন না হয় বা অনেক সময় পেরিয়ে যায়, তবে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল অথবা সিভিল কোর্টে মামলা দায়ের করতে হবে।
- জমি কেনার আগে অবশ্যই দলিল ও পূর্ববর্তী দলিলসমূহ, খতিয়ান, নামজারি ও দখল পরিস্থিতি যাচাই করা জরুরি।
খতিয়ান হলো জমির দখলের প্রমাণ, কিন্তু দলিলের মাধ্যমে মালিকানা স্থায়ী হয়। একটির সঙ্গে আরেকটির মিল না থাকলে মালিকানা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। তাই দলিল ও রেকর্ড উভয়কেই গুরুত্ব দিয়ে, প্রমাণপত্র ও কাগজপত্র ঠিক রেখে জমি কেনাবেচা করা উচিত।
রাকিব