
রংপুরের কাউনিয়ায় মরা তিস্তা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। খুঁটি নির্মাণের পর চার বছর পার হয়ে গেলেও অর্থাভাবে সেতুর বাকি অংশের কাজ শুরু করা যায়নি। এতে করে চরাঞ্চলের ছয় গ্রামের মানুষ উপজেলা সদর ও হারাগাছ পৌর এলাকায় যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
হারাগাছ পৌর প্রকৌশলী দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চর চতুরা, মায়ার চর, চারমাথা, পল্লীমারী, চর একতা ও নাজিরদহ গ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ করতে, বাংলাবাজার দক্ষিণ ঠাকুরদাস গ্রামের মোস্তারপাড় এলাকায় ৭৬ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ।
উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে সেতুটি কয়েক ধাপে নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। ২০১৯ সালে প্রথম দরপত্রের মাধ্যমে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর একাংশ নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স মামুন কনস্ট্রাকশন। তারা ২০২০ সালে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ করলেও পরে আর কাজ শেষ করেনি।
এরপর ২০২০ সালের নভেম্বরে দ্বিতীয় দফায় প্রায় ২৯ লাখ টাকার দরপত্রে কাজ পায় নুর এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ৫০ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ করে। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ অর্থ বরাদ্দ দিতে না পারায় এরপর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।
নুর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নুর আলম লাভলু বলেন, “সেতুটির কোনো নির্ধারিত নকশা ছিল না এবং কাজের প্রাক্কলন অনুযায়ী বরাদ্দকৃত অর্থের সঙ্গে প্রকৃত ব্যয়ের মিল ছিল না। তাছাড়া তখন পৌর কর্তৃপক্ষ অর্থ পরিশোধে নানা জটিলতা করত। তাই আমরা অর্ধেক কাজ করেই থেমে যাই।”
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মরা তিস্তা নদীর মাঝখানে সেতুর খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কোনো সংযোগ নেই। স্থানীয়রা জানান, পাঁচ বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে ওপাড়ের বাসিন্দারা এখনও নৌকা বা পানি পার হয়েই যাতায়াত করছেন।
বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা নয়ন বলেন, “চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সেতু নির্মাণ। কাজ শুরুর পর এতদিন বন্ধ পড়ে আছে। এখন মানুষ বালুর বস্তা ফেলে নদী পার হচ্ছে। শুনেছি অর্থাভাবেই কাজ বন্ধ রয়েছে।”
শাঁখারীপাড়া গ্রামের কৃষক সোলায়মান আলী বলেন, “সেতু না হওয়ায় কৃষিপণ্য বাজারে নেওয়া কঠিন। বাধ্য হয়ে ফরিয়া পাইকারদের কাছে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়।”
ওই গ্রামের আনোয়ারা বেগম বলেন, “ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত, হাটে পণ্য নেওয়া—সবকিছুতেই কষ্ট হচ্ছে। অসুস্থ রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়াও সম্ভব হয় না।”
শাঁখারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া জানায়, “নদীর পানি পার হয়ে স্কুলে যেতে গিয়ে পা পিছলে বই-খাতা ভিজে যায়। বর্ষাকালে পানি বেড়ে গেলে অনেক দূর ঘুরে যেতে হয়।”
হারাগাছ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. হামিদুর রহমান বলেন, “জনস্বার্থে মরা তিস্তা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে পিলার, পায়ার ক্যাপ এবং অ্যাবাটমেন্ট নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু এখন যৌথ অর্থায়নে বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।”
তিনি জানান, “সেতুর নির্মাণ শেষ করতে ১০টি স্লাব, রেলিং এবং দুই পাশে প্রায় ১২০ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ প্রয়োজন। এতে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু এই অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। সরকারিভাবে বরাদ্দ চেয়ে ঢাকায় যোগাযোগ চলছে। বরাদ্দ পেলে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শেষ করা হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হারাগাছ পৌর প্রশাসক মো. মহিদুল হক বলেন, “এর আগে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বদলি হওয়ায় আমি নতুন করে দায়িত্ব নিয়েছি। খোঁজ নিয়ে সেতুর বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।”
নুসরাত