ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসা: রোগীর মৃত্যু হলে করণীয় কী?

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২২ মে ২০২৫

চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসা: রোগীর মৃত্যু হলে করণীয় কী?

ছবি: প্রতীকী

সম্প্রতি দেশে চিকিৎসা অবহেলা ও ভুল চিকিৎসাজনিত মৃত্যুর ঘটনা জনমনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভাঙচুর, চিকিৎসকের ওপর হামলা, নিবন্ধন বাতিল, মামলাসহ নানা ঘটনা আলোচনায় এসেছে। এক ভিডিও আলোচনায় ব্যারিস্টার তাসমিয়া আঞ্জুম এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন।

তিনি জানান, দেশের প্রচলিত আইনে চিকিৎসা অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার ফলে মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিকার পাওয়ার কিছু ব্যবস্থা থাকলেও এখনো পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর আইন প্রণয়ন হয়নি। এ বিষয়ে জনসচেতনতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ।

বর্তমানে দেশে বৈধ হাসপাতালের তুলনায় অবৈধ ক্লিনিকের সংখ্যা বেশি। ১৯৮২ সালের মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া ক্লিনিক চালানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ক্লিনিক, ল্যাব ও হাসপাতাল পরিদর্শন, লাইসেন্স প্রদান এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে আদালতে মামলা করার একক অধিকার কেবল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরই রয়েছে।

চিকিৎসা অবহেলা বলতে শুধু চিকিৎসকের অবহেলা নয়, বরং নার্স, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার এবং ওষুধ সরবরাহকারীর গাফিলতিও এর আওতায় পড়ে। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে হলে প্রমাণ করতে হয় যে, রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের একটি দায়িত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এবং সেই দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা ব্যর্থতার কারণে ক্ষতি বা মৃত্যু ঘটেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টর্ট আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ মামলা করা গেলেও বাংলাদেশে এই আইনের বিচার কাঠামো তেমন গড়ে ওঠেনি। ফলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে হয়।

দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০৪(ক) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি অর্থদণ্ড, কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এছাড়া ৩৩৬, ৩৩৭ ও ৩৩৮ ধারা অনুযায়ী, কারও জীবনের ঝুঁকি তৈরি করা, আঘাত করা বা গুরুতর আঘাত করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

এছাড়া, সিভিল প্রক্রিয়া বিধিমালা ১৯০৮ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। চিকিৎসা একটি চুক্তিভিত্তিক সেবা হওয়ায় চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগেও প্রতিকার চাওয়া যায়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৫২, ৫৩ ও ৪৫ ধারা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবায় অবহেলার প্রমাণ মিললে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন ২০১০ অনুসারে, রোগীর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল করা যেতে পারে। তবে অনেক ভুক্তভোগী এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত নয় বা এতে অংশগ্রহণে অনিচ্ছুক।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসা অবহেলা নিয়ে একটি স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৩ এর খসড়া তৈরি করেছে। এতে চিকিৎসা অবহেলার ঘটনায় ফৌজদারি বিচার, ক্ষতিপূরণ আদায় এবং হাসপাতাল বা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে আইনটি এখনো প্রণয়ন হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চিকিৎসায় অবহেলা রোধে মানসম্পন্ন চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, চিকিৎসকদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং রোগীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করাই একমাত্র পথ। সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসা অবহেলার কারণে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন ব্যারিস্টার তাসমিয়া আঞ্জুম।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=FjxdU5GNA5A

রাকিব

×