
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় সম্প্রতি ঘটেছে এক রহস্যময় ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা। সোমবার রাতে কলকাতার আকাশে এক ঝাঁক অজ্ঞাত ড্রোন ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড হেডকোয়ার্টারের কাছাকাছি এলাকায় এই ড্রোন উড়তে দেখা যাওয়ায় সৃষ্ট হয়েছে তীব্র উদ্বেগ ও রহস্য।
কলকাতা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রাতের আঁধারে ড্রোনগুলোকে চক্কর কাটতে দেখা যায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে শুরু করে ব্রিগেড ময়দান এবং বিজয়দুর্গের আশপাশের এলাকায়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ফোর্ট উইলিয়াম এলাকাটি একটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত দুর্গ এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলের, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ ও বাংলাদেশ সীমান্ত, নিরাপত্তা তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত হেডকোয়ার্টার।
এই এলাকায় ড্রোন জাতীয় কোনো উড়ন্ত যন্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সেকারণেই বিষয়টি আরও বেশি সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। পুলিশের মতে, ড্রোনগুলো মহেশতলার দিক থেকে উড়ে এসেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছে, ঘটনাটি জানার পর দ্রুত সেনাবাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গায় সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি এখন সেনা ও পুলিশ গোয়েন্দা ইউনিট ক্ষতিয়ে দেখছে।
বর্তমানে ড্রোন প্রযুক্তি নানা কাজে ব্যবহৃত হয়, অনুষ্ঠান ধারণ, নজরদারি কিংবা জরুরি কার্যক্রমে। তবে সেনা দুর্গ এলাকার মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলে এ ধরনের ড্রোন ওড়া জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে আবারও সামনে এসেছে ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার প্রসঙ্গ। ৭ মে কাশ্মীরের পেহেলগামে ভারতীয় সেনাদের উপর হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত ইসলামাবাদে পাল্টা হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে, যার মধ্যে একটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান। এরপর কয়েকদিন ধরে চলা সীমান্ত সংঘর্ষের পর ১০ মে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরোতিতে মধ্যস্থতার দাবি করেন।
এই সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির আবহেও ভারত সরকার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। সীমান্তজুড়ে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। আর সেই প্রেক্ষিতেই কলকাতার আকাশে ড্রোন ওড়ার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ড্রোনগুলো যদি নজরদারি বা সামরিক তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে এটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হতে পারে। এখনো পর্যন্ত এদের উৎস, উদ্দেশ্য এবং নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষ সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। তবে ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না।
আঁখি