
ছবি :সংগৃহীত
রবিবার, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন কর ছাড় বিল অনুমোদন করেছে, যা চলতি সপ্তাহেই প্রতিনিধি পরিষদে পাস হতে পারে। এই বিলটি ট্রাম্পের ২০১৭ সালের কর ছাড় কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করবে এবং এর ফলে জাতীয় ঋণে অতিরিক্ত ৫ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত হতে পারে।
এই প্রস্তাব এমন সময় এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ নিয়ে আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডি’স। শুক্রবার মুডি’স দেশটির ক্রেডিট রেটিং হ্রাস করেছে । তারা উল্লেখ করে যে, মার্কিন ঋণ এখন ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে—বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মার্কিন ঋণ কী?
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের যেসব অর্থ ঋণদাতাদের কাছ থেকে ধার নেওয়া হয়েছে তার মোট পরিমাণই হলো জাতীয় ঋণ। বর্তমানে এর পরিমাণ ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলার, যা দেশের বার্ষিক উৎপাদনের (GDP) ১২২ শতাংশ। এই ঋণ প্রতি তিন মাসে গড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার করে বাড়ছে। ২০২০ সালের মহামারির সময় এই অনুপাত সর্বোচ্চ ১৩৩ শতাংশে পৌঁছেছিল।
ঋণসীমা (Debt Ceiling) কী এবং এটি কেন বারবার বাড়ানো হয়?
সরকার যদি আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করে, তখন একটি ঘাটতি (deficit) তৈরি হয়। এই ঘাটতি পূরণ করতে সরকার আরও ঋণ গ্রহণ করে। কিন্তু এটি সীমিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ঋণসীমা নির্ধারণ করে। যখন ঋণসীমা ছুঁয়ে ফেলে, তখন সরকারকে নতুন ঋণ নিতে হলে কংগ্রেসকে সেটি বাড়াতে বা স্থগিত করতে হয়। ১৯৬০ সাল থেকে ৭৮ বার এই ঋণসীমা সংশোধন হয়েছে।
ট্রেজারি বিল, নোট ও বন্ড কী?
যুক্তরাষ্ট্র যখন ঋণ চায়, তখন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্র (debt securities) বাজারে বিক্রি করে:
ট্রেজারি বিল (T-bills): ১ বছরের মধ্যে পরিশোধযোগ্য
ট্রেজারি নোট (T-notes): ২-১০ বছরের মেয়াদি
ট্রেজারি বন্ড (T-bonds): ২০-৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি
এগুলো বিনিয়োগকারীদের থেকে সরকারকে দেওয়া ঋণ এবং নির্দিষ্ট সুদসহ পরিশোধযোগ্য।
এই ঋণের মালিক কারা? সবচেয়ে বেশি ঋণ কোন দেশগুলোর হাতে?
৩৬.২ ট্রিলিয়নের মধ্যে ৭৫% (২৭.২ ট্রিলিয়ন ডলার): মার্কিন অভ্যন্তরীণ মালিকানায়
১৫.১৬ ট্রিলিয়ন (৪২%): ব্যক্তি, মিউচুয়াল ফান্ড, পেনশন তহবিল
৭.৩৬ ট্রিলিয়ন (২০%): সরকারি সংস্থা ও ট্রাস্ট
৪.৬৩ ট্রিলিয়ন (১৩%): ফেডারেল রিজার্ভ
২৫% (৯.০৫ ট্রিলিয়ন ডলার) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মালিকানায়
ওয়ারেন বাফেট তার বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কোম্পানির মাধ্যমে সর্ববৃহৎ ব্যক্তিগত ট্রেজারি ধারক, যার মূল্য ৩১৪ বিলিয়ন ডলার।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ঋণের ৯.০৫ ট্রিলিয়ন ডলার ধারণ করছে। এর মধ্যে:
- জাপান রয়েছে শীর্ষে, যার অধীনে আছে ১.১৩ ট্রিলিয়ন ডলার
- যুক্তরাজ্য চীনকে টপকে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশি ধারক হয়েছে, যার হাতে আছে ৭৭৯.৩ বিলিয়ন ডলার
- চীনের অধীনে রয়েছে ৭৬৫.৪ বিলিয়ন ডলার
- কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ (৪৫৫.৩ বিলিয়ন ডলার) বিপুল পরিমাণ মার্কিন ঋণ ধারণ করে, কারণ এটি একটি করস্বর্গ (tax haven)
- কানাডা ধারণ করে ৪২৬.২ বিলিয়ন ডলার
ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্কের (tariffs) প্রতিক্রিয়ায়, জাপান ও চীন উভয়ই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি হোল্ডিংসকে বাণিজ্য আলোচনায় চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার (leverage) হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
এই ঋণ সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের জন্য কী অর্থ বহন করে?
সরকারকে ঋণের সুদ পরিশোধে বেশি ব্যয় করতে হয়, ফলে অন্যান্য খাতে ব্যয় কমানো বা কর বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়।
করের হার বাড়ানো হতে পারে, যা নাগরিকদের জন্য জীবিকা ব্যয়বহুল করে তোলে।
ঋণের কারণে সুদের হার বেড়ে যেতে পারে, ফলে গৃহঋণ, গাড়ির ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের খরচ বেড়ে যাবে।
সা/ই