
ছবি: প্রতীকী
আগামী অর্থবছরের বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর লক্ষ্য হলো রিয়েল এস্টেট খাতে কালো টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রকৃত মূল্যে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন উৎসাহিত করা এবং রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনা।
দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশে জমি বা ফ্ল্যাট কেনাবেচার ক্ষেত্রে দলিলে প্রদর্শিত মূল্য প্রকৃত মূল্য থেকে অনেক কম দেখানো হয়। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারায়, এবং কালো টাকার মালিকরা সহজেই অবৈধ অর্থ বৈধ সম্পত্তিতে পরিণত করতে সক্ষম হন। একদিকে যেমন সরকার বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে প্রকৃত দামে সম্পদ বিক্রি করেও কর ফাঁকির কারণে অনেকের অর্থ কালো টাকায় পরিণত হয়।
এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার এমন একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চাইছে, যাতে রেজিস্ট্রেশনের সময় কর ফাঁকির প্রবণতা কমে, এবং মানুষ দলিলে প্রকৃত দাম দেখাতে আগ্রহী হন। এর জন্য সরকার নিবন্ধনের মোট খরচ ১৪-১৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮-৯ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।
যেসব পরিবর্তন আসছে
স্ট্যাম্প ফি: বর্তমান ১.৫% থেকে কমিয়ে ১% করার প্রস্তাব।
স্থানীয় সরকার কর: ইউনিয়নে ৩% এবং পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে ২% হার অপরিবর্তিত থাকবে।
গেইন ট্যাক্স (মূলধনী মুনাফা কর)
- ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ‘ক’ শ্রেণির জমির ক্ষেত্রে ৮% থেকে কমিয়ে ৪%।
- অন্যান্য শ্রেণির ক্ষেত্রে ৬% থেকে কমিয়ে ৩%।
- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জমির জন্য ৬% থেকে ৩%।
- সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকায় ৪% থেকে ২% এবং অন্যান্য এলাকায় ২% থেকে ১%।
ভ্যাট (ফ্ল্যাটের আয়তন অনুযায়ী)
- ১৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত: ২% থেকে কমিয়ে ১%।
- ১৬০১–২৪০০ বর্গফুট: ২%।
- ২৪০০ বর্গফুটের বেশি: ৩% ভ্যাট প্রস্তাব করা হচ্ছে।
মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন
বর্তমানে দলিল মূল্য নির্ধারণের জন্য মৌজার গত দুই বছরের গড় রেজিস্ট্রেশন মূল্য ব্যবহার করা হয়, যা অনেক সময় প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। সরকার এবার সেই পদ্ধতি সংস্কার করে মৌজাভিত্তিক ক্লাস্টার তৈরি করতে যাচ্ছে, যাতে একই মৌজার ভেতরেও ভিন্ন ভিন্ন এলাকার দাম ভিন্নভাবে নির্ধারিত হয়। এতে মূল রাস্তার পাশের জমি এবং পেছনের গলির জমির মধ্যে দামের বাস্তব পার্থক্য প্রতিফলিত হবে।
কালো টাকার বিষয়ে সরকার কড়াকড়ি অবস্থানে
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব দীর্ঘদিন ধরেই রেজিস্ট্রেশন খরচ কমানোর পাশাপাশি কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চেয়ে আসছে। তবে অর্থমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ রাখা হবে না।
রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কর-কাঠামো সহজ ও স্বচ্ছ করা হলে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে কালো টাকার বিরুদ্ধে সরকার কতটা কার্যকরভাবে অবস্থান নিতে পারে, সেটিই হবে আসল চ্যালেঞ্জ।
রাকিব