
বিট বা বিটরুট-এই গাঢ় লাল রঙের সবজিটি অনেকের প্লেটেই জায়গা করে নিয়েছে সুস্বাদু সালাদ বা জুসের উপকরণ হিসেবে। কিন্তু জানেন কি, বিট খেলে শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকার মেলে কোন অবস্থায়,কাঁচা না সিদ্ধ?
সম্প্রতি এই নিয়েই নানা গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ কিছু তথ্য, যা আপনাকে জানতেই হবে।
বিট হলো একটি নিউট্রিয়েন্ট-ডেনস রুট ভেজিটেবল। এতে থাকে ফোলেট, আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি-র মতো উপকারী উপাদান, যা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর সবচেয়ে বড় কথা, এই সবজি অত্যন্ত কম ক্যালোরির, কিন্তু ফাইবারে ভরপুর—যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়ক।
কাঁচা বিট: পুষ্টির আধার
১০০ গ্রাম কাঁচা বিটে থাকে মাত্র ৪৩ ক্যালোরি, ৯.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২.৮ গ্রাম ফাইবার, ১.৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ১০৯ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি৯। এছাড়াও এতে আছে ৪.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৩২৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ০.৮ মিলিগ্রাম আয়রন এবং ২৩ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম।
কাঁচা বিটে উপস্থিত বিটালেইন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এতে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং দৌড়বিদদের মধ্যে স্ট্যামিনা বাড়ায় বলে বহু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
২০২১ সালে National Library of Medicine-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাঁচা বিট প্রতিদিন খাওয়ালে ৮ সপ্তাহের মধ্যে রক্তে চিনি, HbA1c, লিভার এনজাইম, ব্লাড প্রেসার এবং হোমোসিস্টেইন লেভেল কমে আসে। একইসঙ্গে দেখা গেছে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যাপাসিটিও বেড়ে গেছে।
কাঁচা বিট কীভাবে খাবেন?
কাঁচা বিট কুচি করে সালাদে মেশাতে পারেন, অথবা কমলার রস বা আপেল, ডালিমের সঙ্গে ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ডিটক্স জুস বানাতে পারেন। চাইলে সিদ্ধ আলু, মশলা আর ব্রেডক্রাম্বসের সঙ্গে মিশিয়ে বানাতে পারেন স্বাস্থ্যকর বিটের কাটলেট।
সিদ্ধ বিট: যতটা উপকারী?
সিদ্ধ বিটেও থাকে প্রায় ৪৪ ক্যালোরি, ১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৬ গ্রাম প্রোটিন, আর কিছুটা ফোলেট ও পটাশিয়াম। তবে সেদ্ধ করার সময় অতিরিক্ত গরমে ভিটামিন সি ও কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়।
তবুও সিদ্ধ বিটে থাকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম।যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য, পেশির কার্যকারিতা এবং অক্সিজেন বহনে সহায়তা করে। তবে সেদ্ধ করার সময় কম পানি ব্যবহার করা এবং বেশি সময় না রান্না করলেই পুষ্টিগুণ কিছুটা বজায় রাখা যায়।
কোনটা বেশি উপকারী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা বিটেই পুষ্টিগুণ সবচেয়ে বেশি বজায় থাকে।বিশেষ করে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা। তবে সিদ্ধ বিটও একেবারে খারাপ নয়।সঠিকভাবে রান্না করলে এটিও শরীরের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে।
তাই বিট খাওয়ার সময় যদি পুষ্টির কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে চান, তাহলে কাঁচা অবস্থাতেই খান বেশি। তবে স্বাদের কথা ভেবে কিংবা হজমের সুবিধার্থে সিদ্ধ খেলে তাতেও পাবেন উপকার।শুধু রান্নার পদ্ধতি ঠিক রাখতে হবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/ycysv9h3
আফরোজা