
ছবিঃ সংগৃহীত
ইসরায়েলের সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরও ইরান শান্ত নেই। যুদ্ধবিরতির পরেও শত্রুর হুমকি শেষ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আমির হাতামী। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইরান দ্বিতীয় দফা যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
রোববার (৩ আগস্ট) সেনাবাহিনীর গ্রাউন্ড ফোর্সের সিনিয়র কমান্ডার ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মেজর জেনারেল হাতামী বলেন, “সেই শত্রু, যাকে আমরা বহুদিন ধরে চিনে আসছি, তার ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। বিশেষ করে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল আবারও আমাদের বিরুদ্ধে একটি মারাত্মক কৌশলগত ভুল করেছে।”
তিনি জানান, ইরানের জনগণের অলৌকিক ধৈর্য ও প্রতিরোধই প্রমাণ করেছে শত্রুর পরিকল্পনা ব্যর্থ। তাদের ধারণা ছিল একতরফা হামলায় ইরানকে দমিয়ে রাখা যাবে, কিন্তু তারা ভুল করেছে।
গত ১৩ জুন শুরু হওয়া সংঘর্ষে ইসরায়েল ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও আবাসিক এলাকায় ভয়াবহ হামলা চালায়। পরে ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এরই প্রতিক্রিয়ায় ইরান চালায় পাল্টা প্রতিরোধ। ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোর পরিচালনা করে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’ নামের প্রতিশোধমূলক হামলা, যার আওতায় ২২ দফায় মিসাইল ছোঁড়া হয় ইসরায়েলের দখলকৃত বিভিন্ন শহরের দিকে।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী কাতারে অবস্থিত আমেরিকার সবচেয়ে বড় ঘাঁটি আল উদাইদে একাধিক মিসাইল নিক্ষেপ করে। মেজর জেনারেল হাতামীর মতে, এই পাল্টা হামলাগুলো প্রমাণ করেছে যে ইরানের সামরিক শক্তি আগের চেয়ে অনেক বেশি সুসংহত এবং কার্যকর।
তিনি বলেন, “আমাদের মিসাইল ও ড্রোন সক্ষমতা অক্ষত রয়েছে এবং পুরোপুরি সচল। যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত ছিল। আত্মরক্ষার পথেই আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাব।”
হাতামী আরও যোগ করেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ধর্মীয় পরিচয়, দেশপ্রেম এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির কারণেই বৈশ্বিক ঔদ্ধত্য ইরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তবে ইরান পিছু হটবে না।
সেনাবাহিনী প্রধানের ভাষায়, স্থল, নৌ, বিমান ও প্রতিরক্ষা — এই চারটি শাখাতেই ইরান দ্রুতগতিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করছে, এবং সব শাখায় যুদ্ধপ্রস্তুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি মনে করিয়ে দেন, ইসরায়েলের ৮০ বছরের কম সময়ের ইতিহাসজুড়ে তারা আগ্রাসন চালিয়েছে — গাজা থেকে শুরু করে ইরান, লেবানন ও সিরিয়া পর্যন্ত। যদিও বর্তমানে ২৪ ঘণ্টার কার্যকর যুদ্ধবিরতি সাময়িকভাবে সংঘর্ষ বন্ধ রেখেছে, তবে ইরান তা স্থায়ী মনে করছে না।
হাতামীর হুঁশিয়ারি, “আমরা শত্রুর প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছি। দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হলে এবার ইরানের প্রতিক্রিয়া হবে আরও তীব্র ও বিস্তৃত।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বার্তা শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা — ইরান আর পেছনে ফিরবে না, এবার আত্মরক্ষার পাশাপাশি আঘাত হানার মনোভাবও তাদের প্রস্তুতির অংশ।
ইমরান