ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তিতুমীর কলেজের পুরাতন বিজ্ঞান ভবন ঝুঁকি আর অবহেলার প্রতিচ্ছবি

মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ রাব্বী, তিতুমীর কলেজ

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ২১ মে ২০২৫

তিতুমীর কলেজের পুরাতন বিজ্ঞান ভবন ঝুঁকি আর অবহেলার প্রতিচ্ছবি

ঐতিহ্যবাহী সরকারি তিতুমীর কলেজের পুরাতন বিজ্ঞান ভবন বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। জরাজীর্ণ এই ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়া যেন স্বাভাবিক ঘটনা। ভবনের কক্ষগুলোর দরজা-জানালার অবস্থাও বেহাল, এমনকি অনেক কক্ষের জানালা পর্যন্ত ভাঙা। এমনকি এ ভবনে থাকা টয়লেট গুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই ভবনের অবস্থা এমন যে,  একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প নিমিষে  ভবনটিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে।

এদিকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞান ভবনের একটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস চলাকালীন ছাদের পলেস্টার খসে পড়ে আহত হন এক শিক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে এখন সেই ভবনে ক্লাস করতে ভয় পান কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠ গ্রহণ করছেন তারা।

অথচ  দুটি আধুনিক ১০ তলা ভবন রয়েছে ক্যাম্পাসটিতে একটি নতুন বিজ্ঞান ভবন ও অন্যটি প্রশাসনিক ভবন। ২০১০ সালে এই ভবনগুলোর নির্মাণ প্রকল্প পাস হলেও দীর্ঘ ১৫ বছরেও পুরোপুরি চালু করা যায়নি। নতুন বিজ্ঞান ভবনের প্রথম ছয়টি তলায় কার্যক্রম চললেও ৭ম, ৮ম ও ৯ম তলা এখনও রয়ে গেছে অব্যবহৃত আর ১০ম তলায় একটি কক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে পরিসংখ্যান বিভাগের জন্য। ভবনগুলোর কিছু কাজ এখনও অসমাপ্ত। যার দরুন রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সংকট এখন চরমে। 

ভবনের এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে  রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, "বর্তমানে বিজ্ঞান ভবনের যে অবস্থা, তা সত্যিই শোচনীয়। ভবনটির বয়স অনেক হওয়ায় এটি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা এখানে ক্লাস করতে চরম অস্বস্তি বোধ করে। নতুন ভবন থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস করতে হচ্ছে। আমরা চাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবনের বাকি কাজ শেষ করে সেখানে আমাদের ক্লাসের ব্যবস্থা করা হোক। কারণ ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে এই পুরাতন বিজ্ঞান ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।"

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, আমি অর্থনীতি বিভাগের ১৩১৩ নম্বর কক্ষে ক্লাস করি। এই 

কক্ষটির ছাদের পলেস্তারা খসে খসে পড়েছে কিছু কিছু জায়গায় খসে পড়ার সম্ভাবনার রয়েছে। আমি যখন ক্লাস করি তখন সবসময় আতঙ্কে থাকি যে ,কখন যেন এটি খসে পড়ে। আমাদের শিক্ষকদের উচিত এ বিষয়ে নজর দেওয়া এবং এই ভবনে ক্লাস নেওয়া পরিহার করা এবং এটি ভেঙে ফেলে নতুন ভবন নির্মাণ করা যাতে করে কোন শিক্ষার্থীর আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা না ঘটে।

পুরাতন বিজ্ঞান ভবন নিয়ে কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, "আমরা একবার নয়, বহুবার পুরাতন বিজ্ঞান ভবনের ঝুঁকির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনো সমাধান হয়নি। এটি মূলত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাজ। তারা জানিয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই তারা পরিদর্শনে আসবে এবং তহবিল বরাদ্দ হওয়ার পরেই কাজ শুরু হবে।" 

তিনি আরও বলেন, "এ বিষয়টি অ্যাকাডেমিক মিটিং, সম্পাদক মণ্ডলী এবং উন্নয়ন কমিটির সদস্যদের বারবার অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফান্ড না থাকলে আমাদের কিছুই করার নেই।"

নতুন বিজ্ঞান ভবনের অব্যবহৃত অংশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "নতুন বিজ্ঞান ভবনের বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কারণে আটকে আছে। তারা শুধু 'আজ হবে, কাল হবে' এমন আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে না।"

কলেজের উন্নয়ন কমিটির সদস্য মো. গালিব হোসেন বলেন, পুরাতন বিজ্ঞান ভবন কলেজের জন্য একটি বোঝা হয়ে গেছে।এটি শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়ের জন্যই খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে তাই। এই ভবনটি ভেঙে ফেলা দরকার।

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার নাজমুস সাকিব বলেন, "পুরাতন বিজ্ঞান ভবন সংস্কারের বাজেটের জন্য আবেদন করেছি। বাজেট অনুমোদন হওয়ার পর কাজ শুরু করা হবে"। নতুন দশতলা বিজ্ঞান ভবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমরা শুধু ভবন এর নির্মাণ কাজ করেছি কিন্তু ফার্নিচারের কাজ আমরা করিনি।

সজিব

×