ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশিদের জন্য কম খরচে রাশিয়ায় বিশ্বমানের পড়াশোনা

মো: আতিকুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:২৬, ২১ মে ২০২৫

বাংলাদেশিদের জন্য কম খরচে রাশিয়ায় বিশ্বমানের পড়াশোনা

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে রাশিয়া দিন দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তুলনামূলকভাবে কম খরচ, বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা, সহজ ভর্তি প্রক্রিয়া এবং প্রায় শতভাগ ভিসা সাফল্যের হার এই সকল সুবিধার কারণে রাশিয়া এখন অনেক শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ।

বর্তমানে রাশিয়ায় অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে। বিশেষ করে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস, আইটি ও হসপিটালিটি সেক্টরের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ও সম্মানিত।

রাশিয়ায় ভর্তি পেতে IELTS বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক ভাষা পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক নয়। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র SSC ও HSC পরীক্ষায় ন্যূনতম GPA ২.৫০ থাকলেই আবেদন করা যায়। মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে ভর্তি পেতে হলে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স পর্যায়ে ন্যূনতম ৫৫% নম্বরই যথেষ্ট।

রাশিয়ার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক টিউশন ফি গড়ে ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে থাকে। আবাসন, মেডিকেল ইনস্যুরেন্স, ভিসা ফি, ডকুমেন্ট লিগালাইজেশন ও এয়ার টিকিটসহ প্রথম বছরের পূর্ণ খরচ পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। রাশিয়ায় পড়াশোনার সময় থেকেই পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ রয়েছে। ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর ফুল-টাইম ওয়ার্ক পারমিট এবং নির্দিষ্ট সময় পর স্থায়ী বসবাসের (Green Card) সুবিধাও পাওয়া যায়। Green Card পেলে একজন বিদেশি নাগরিক রাশিয়ার স্থায়ী নাগরিকের অধিকারের প্রায় সমান সুযোগ পান।

বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাশিয়ার অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত শীর্ষস্থান অধিকার করে আসছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লোমোনোসভ মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি, সেচেনভ ফার্স্ট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, মস্কো ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি (MIPT), আইটিএমও ইউনিভার্সিটি (ITMO), এবং পিটার দ্য গ্রেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি। এসব প্রতিষ্ঠান ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপও দেওয়া হয়।

রাশিয়ায় মূলত দুটি সেমিস্টারে ভর্তি নেওয়া হয়—ফল সেমিস্টার (সেপ্টেম্বর থেকে শুরু) এবং স্প্রিং সেমিস্টার (ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু)। ফল সেশনের আবেদন ডিসেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত নেওয়া হয় এবং স্প্রিং সেশনের জন্য অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনলাইন আবেদন ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। আবেদনের পর অনলাইন টেস্ট বা ইন্টারভিউ নেওয়া হয় এবং নির্বাচিত হলে অফার লেটার ইস্যু করে রাশিয়ার ফেডারেল মাইগ্রেশন সার্ভিস থেকে ইনভাইটেশন লেটার সংগ্রহ করতে হয়।

আবেদনের জন্য প্রয়োজন হয় বৈধ পাসপোর্ট, একাডেমিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট, ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন), ব্যক্তিগত সিভি বা রিজিউমে, মোটিভেশন লেটার (যদি প্রযোজ্য হয়), মেডিকেল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য একটি রিসার্চ প্রপোজাল। কিছু ক্ষেত্রে সুপারিশপত্র বা কর্ম-অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্রও প্রয়োজন হতে পারে।

রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেই নয়, শিল্প, সংগীত, সাহিত্য, ব্যালে ও চিত্রকলার ক্ষেত্রেও বিশ্বখ্যাত। তাই যারা সৃজনশীল কিংবা গবেষণামূলক পড়াশোনায় আগ্রহী, তাদের জন্য রাশিয়া হতে পারে আদর্শ গন্তব্য। কম খরচে বিশ্বমানের ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি স্থায়ী বসবাস, চাকরি ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের পথ সুগম করছে এই দেশটি। ফলে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের জন্য রাশিয়াকে তালিকায় রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ইমরান

×