
ছবি: সংগৃহীত।
যেখানে বিশ্বজুড়ে শিল্পখাতে পরিবেশদূষণ ও প্রাণীর অমানবিক অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, সেখানে চীন আবারও প্রমাণ করলো—যেখানে সমস্যা, সেখানেই সম্ভাবনা। দেশটি এবার এমন এক খামার পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছে যা শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, বরং কোটি টাকার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে—নাম ‘ফ্রি রেঞ্জ ফার্মিং’।
এই পদ্ধতিতে নেই গাদাগাদি খাঁচা, কৃত্রিম খাবার কিংবা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। রয়েছে শুধুই খোলা প্রকৃতিতে সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা প্রাণী।
কী এই ফ্রি রেঞ্জ ফার্মিং?
চীনের গ্রামাঞ্চলে ফ্রি রেঞ্জ খামারে মুরগিরা দিন শুরু করে খোলা মাঠে হাঁটাহাঁটি দিয়ে। তারা খায় ঘাস, পোকামাকড়সহ প্রাকৃতিক খাবার। খামারিরা কেবল দিকনির্দেশনা দেন—বাকিটা প্রাণীদের নিজস্ব ছন্দেই চলে। এতে সময় একটু বেশি লাগে ঠিকই, কিন্তু ফলাফল—আরও পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও নিরাপদ ডিম ও মাংস।
এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত অর্গানিক ডিমের দাম সাধারণ ডিমের চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি, যা বছর শেষে একজন খামারিকে এনে দেয় লাখ লাখ ইউয়ান আয়।
প্রযুক্তি ও পশুকল্যাণের যুগলবন্দি
চীনের ফ্রি রেঞ্জ খামারগুলোতে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। রয়েছে কিউআর কোড, সেন্সর, স্মার্ট নজরদারি ব্যবস্থা। এমনকি একজন ক্রেতা জানতে পারেন—ডিমটি কোন মুরগির, সেই মুরগি কী খেয়েছে, কোন পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। এই স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি চাহিদা বাড়িয়েছে দেশজ ও আন্তর্জাতিক বাজারে।
চীনের এই মডেল শুধু উৎপাদন নয়, এক সহানুভূতিশীল জীবনদর্শনের প্রতিচ্ছবি। যেখানে কৃষক, প্রাণী ও প্রকৃতি—তিনটি পক্ষই উপকৃত হচ্ছে। প্রাণী ভালো থাকলে খামারও ভালো থাকবে—এই নীতিতেই গড়ে উঠেছে পুরো কাঠামো।
দক্ষিণ এশিয়ার জন্য শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো চাইলে এই মডেল গ্রহণ করে নিজেদের কৃষি ও খামার খাতকে আরও টেকসই ও লাভজনক করে তুলতে পারে। যেখানে প্রাণীকল্যাণ, নিরাপদ খাদ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষা—সবকিছুর সমন্বয় রয়েছে।
চীনের ফ্রি রেঞ্জ ফার্মিং দেখিয়ে দিল, দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেই খামার হতে পারে কোটি টাকার ইন্ডাস্ট্রি। এখন সময় আমাদের শেখার, এবং প্রয়োগের।
নুসরাত