
ছবি: জনকণ্ঠ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রায়পুর বাজার বণিক সমিতি নির্বাচন-২০২৫। গত কয়েক বছর ধরে নানা কারণে নির্বাচন না হওয়ায় বাজারের ব্যবসায়ীরা ছিলেন নেতৃত্বহীনতার অচলায়তনে। এবার তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বাজারে বইছে নতুন উৎসাহ, প্রত্যাশা আর প্রাণচাঞ্চল্য।
আজ বুধবার, ২১ মে, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৮ জুন, শনিবার।
মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে ২২ মে থেকে, জমা দেওয়া যাবে ২৬ মে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। যাচাই-বাছাই হবে ২৮ ও ২৯ মে, এবং ৩ জুন প্রকাশ হবে চূড়ান্ত বৈধ প্রার্থীর তালিকা। প্রতীক বরাদ্দ ১৬ জুন, এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে ভোট গ্রহণের দিনই—২৮ জুন।
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই রায়পুর বাজারে ভোটার ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ ও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দোকানপাটে, চায়ের স্টলে, এমনকি পাইকারি গুদামেও এখন মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—কে আসছেন, কে থাকছেন না।
গত দুই দশক ধরে এখানে ব্যবসা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. জহির হোসেন। তিনি বলেন, “বণিক সমিতির নির্বাচন মানেই আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ। দীর্ঘদিন পর ভোট হতে যাচ্ছে—এই খবরেই আমরা সবাই নতুন করে আশাবাদী।”
সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি: এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি, তবে কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন—বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক পরিষদের সাইফুল ইসলাম মুরাদ, ব্যবসায়ী নেতা বাহার মৃধা, তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান জিয়ন, আলমগীর হোসেন, জিয়া উল্যা মামুন এবং প্রবীণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. ইব্রাহিম মিয়া।
রায়পুর মাতৃ ছায়া হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. বাহার মৃধা বলেন, “বণিক সমিতি শুধু পজিশনের জায়গা নয়, এটি ব্যবসায়ীদের অধিকার ও কল্যাণের সংগঠন। আমি চাই সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক।” রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, “একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকব। প্রতিটি ধাপ আইনানুগভাবে পরিচালিত হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচন তদারকি প্রশাসক মো. ইমরান খান বলেন, “বণিক সমাজ দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। রায়পুরের ব্যবসায়ী নেতারা যদি সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন, তাহলে এই বাজার উন্নয়নের নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে।”
বাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ট্রাফিক ব্যবস্থা, চাঁদাবাজি প্রতিরোধ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা এবং একত্রিত বণিক প্ল্যাটফর্ম গঠন—এসব ইস্যু নিয়ে প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ভোটারদের একটি বড় অংশ তরুণ ব্যবসায়ী। তারা চাইছেন একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব, যিনি ব্যবসা, চিন্তা, প্রযুক্তি ও নীতিনৈতিকতা নিয়ে কাজ করবেন। ব্যবসায়ী কৃষ্ণ বণিক বলেন, “আমরা এমন কাউকে চাই, যিনি কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী হবেন। উন্নয়ন, সমন্বয় আর নিরাপত্তা—এই তিনটি মৌলিক বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।”
রায়পুর বাজার বণিক সমিতির নির্বাচন শুধু একটি সংগঠনের নির্বাচন নয়, এটি ব্যবসায়ী সমাজের শক্তি ও ঐক্যের প্রতিফলন। এবার সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শুধু বাজার নয়, পুরো অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে—এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ ব্যবসায়ীদের।
শহীদ