ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস: প্রকৃতি সংরক্ষণের অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২২ মে ২০২৫

আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস: প্রকৃতি সংরক্ষণের অঙ্গীকার

ছবি সাইয়েদ আল জোহন

প্রতি বছর ২২ মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। একে এক ধরনের মানবজাতির ও পৃথিবীর জন্য একটি স্মরণবার্তা বলা যায়— যে আমরা প্রকৃতির সেই রঙ-বৈচিত্র্যকে সযত্নে রক্ষা না করলে, ভবিষ্যত প্রজন্মদের জন্য এক জীবন্ত পৃথিবী রেখে যাওয়া সম্ভব হবে না। ২০২৫ সালের এই দিবসের থিম ছিল “প্রকৃতির জন্য পুনর্নবীকরণ” — যা শুধু একক একটি ধারণা নয়, বরং মানবজীবনের সঙ্গে প্রকৃতির অটুট সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন।


জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভার্সিটি বলতে বুঝায় পৃথিবীর সব ধরনের জীব—গাছপালা, প্রাণী, মাছ, পোকামাকড়, এবং মাইক্রোঅর্গানিজমের বৈচিত্র্য। প্রতিটি প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি প্রকৃতির এক অপরিহার্য অংশ। তারা একে অপরের সঙ্গে জড়িত এবং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এই নান্দনিক ও কার্যকরী সিস্টেম ছাড়া, আমাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিন্তে করা সম্ভব নয়।


গত কয়েক দশকে, বনাঞ্চল ধ্বংস, জলজ ও স্থলজ বাস্তুসংস্থানের অবক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও অতিরিক্ত শিকার জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন ও সমুদ্রের বহু প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশেও সুন্দরবন, পদ্মা-যমুনা নদীর বেষ্টিত এলাকায় জীববৈচিত্র্যের অবস্থা চিন্তার বিষয়।

বিশ্বের বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, এই হারানো জীববৈচিত্র্য মানে শুধু প্রকৃতির ক্ষতি নয়, বরং মানব সভ্যতার নিরাপত্তার জন্য ভয়ংকর সংকেত। স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে শুরু করে খাদ্য নিরাপত্তা পর্যন্ত সবকিছুই প্রভাবিত হতে পারে।

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। নদী, বন ও জলাভূমি ঘেরা এই দেশে বন্যপ্রাণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও মাছ রয়েছে। সরকার এবং পরিবেশ সংরক্ষণকারী সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নিয়েছে যেমন বন সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি।

তবে তা যথেষ্ট নয়। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, শিল্পায়নের নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ শিক্ষার সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে।


আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস শুধু স্মরণবার্তা নয়, এক অভূতপূর্ব কর্মসূচির আহ্বান। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে পরিবেশ রক্ষার ছোট ছোট উদ্যোগ যেমন – প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, গাছ লাগানো, বর্জ্য সঠিকভাবে ফেলা ও জল সংরক্ষণ করতে হবে।

যত দিন আমরা প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলব, তত দিনই এই পৃথিবী থাকবে বেঁচে, থাকবে আমাদের ভবিষ্যত।
 

এসএফ

×