ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সান্ডা একটি নির্দিষ্ট প্রাণীর নাম নয়

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ১৮ মে ২০২৫

সান্ডা একটি নির্দিষ্ট প্রাণীর নাম নয়

ছ‌বি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বারবার ভেসে উঠছে একটি শব্দ—‘সান্ডা, কফিলের ছেলে’। মিম, কমেন্ট, ভিডিও—সব জায়গায় যেন ছড়িয়ে পড়েছে এই বাক্যাংশ। কিন্তু কোথা থেকে এল এই ট্রেন্ড? আর ‘সান্ডা’ নামক বস্তুটি আসলে কী? এটি কি সত্যিই খাওয়ার জিনিস?

এই ট্রেন্ডের সূত্রপাত সৌদি প্রবাসী এক বাংলাদেশি ভ্লগার আবদুল মান্নানের একটি ভিডিও থেকে। তার ফেসবুক প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি সৌদি আরবের দাম্মামে থাকেন এবং পেশায় ছাগল, উট ইত্যাদি চড়ান। সম্প্রতি তার একটি রিলসে দেখা যায় একটি সান্ডা ফুসফুস করছে। অল্প সময়েই সেই ভিডিওটি প্রায় এক কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সান্ডা’কে জনপ্রিয় করে তোলে।

ভিডিওটিতে প্রাণীটির অদ্ভুত হাবভাব এবং সেটির সঙ্গে কফিল—মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ কর্তাকে বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দ—এবং ‘কফিলের ছেলে’ যুক্ত করে তৈরি হয়েছে একধরনের হাস্যরস। অনেকে ভিডিওর নিচে মজার কমেন্ট করে জানতে চেয়েছেন, “সান্ডা কি খাওয়া যায়?”

সান্ডা আসলে কী? খাওয়া যায় নাকি?

ব্রিটানিকার তথ্য অনুযায়ী, ‘সান্ডা’ বলতে বোঝানো হয় Spiny-tailed Lizard, বাংলায় যার অর্থ কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা টিকটিকি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx, যা অ্যাগামিডি (Agamidae) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এই গোত্রে অন্তর্ভুক্ত প্রজাতির সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি। অর্থাৎ, সান্ডা একটি নির্দিষ্ট প্রাণী নয়, বরং মরু অঞ্চলে বাস করা এমন এক শ্রেণির লিজার্ডকে বোঝাতেই এই নামটি ব্যবহার হয়।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ বলেন, “সান্ডা একটি তৃণভোজী প্রাণী, যা ঘাস, লতাপাতা, গাছের পাতা ও ফলমূল খায়। মাঝে মাঝে ছোট পোকামাকড়ও খেয়ে থাকে, তবে পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় এরা নিরামিষভোজী।”

উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে ভারতের শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক অঞ্চলজুড়ে এই প্রাণীটির বিস্তৃতি রয়েছে। সৌদি আরবের মরুভূমিও সান্ডার অন্যতম প্রাকৃতিক আবাসস্থল। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের আলোতে গা সেঁকে কাটায় আর সন্ধ্যায় নিরাপত্তার জন্য গর্তে চলে যায়। শিকারি দেখলে পাথরের খাঁজে লুকিয়ে পড়ে এবং নিজের লম্বা কাঁটাযুক্ত লেজ ব্যবহার করে আত্মরক্ষা করে।

সান্ডার মাথা চওড়া, শরীর মোটা এবং চারটি শক্তিশালী পা রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের গড় দৈর্ঘ্য ২৫–৩০ সেন্টিমিটার। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এর মোটা, কাঁটায় ভরা লেজ, যা আত্মরক্ষার জন্য প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সব প্রজাতির সান্ডাই ডিম পাড়ে।

খাওয়ার উপযোগিতা ও সংস্কৃতি

মরুভূমির কঠিন পরিবেশে অভিযোজিত প্রাণীটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিকভাবেই নয়, স্থানীয় সংস্কৃতিতেও জায়গা করে নিয়েছে। মরুর বেদুঈন কিংবা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কেউ কেউ সান্ডা ধরেন এবং খেয়ে থাকেন। এমনকি কোথাও কোথাও সান্ডার বিরিয়ানিও তৈরি হয়। যদিও সৌদি আরবে এটি খুব বেশি খাওয়া হয় না, মাঝেমধ্যে খাওয়া হয়।

অর্থাৎ, সান্ডা শুধু একটি ভাইরাল নাম নয়, এটি একটি বাস্তব প্রাণী—যা একদিকে মরুভূমির পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে মানুষের কৌতূহল ও বিনোদনের খোরাক হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

 

সূত্র: https://youtu.be/2ilb-QaTeHM?si=PAf2B7g2i6GEmv6u

এএইচএ

×