
ছবি: সংগৃহিত
ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ-এর তামাক কারখানাটি বর্তমানে পরিবেশগত এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন কারখানাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয় সেই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে উঠেছে। এলাকার বাতাসে নিকোটিনসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিক থেকে শুরু করে পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোও চরম উদ্বিগ্ন।
১৯৬৫ সালে ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ-এর তামাক কারখানা স্থাপিত হয়। তখন এটি একটি গ্রামীণ জনপদ ছিলো কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই মহাখালী ডিওএইচএস আজ হয়ে উঠেছে ঢাকার অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা—যেখানে বাস করে হাজারো পরিবার, আছে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়। নিকোটিনসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ছড়িয়ে পড়ার কারণে তা শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ সকল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।
বিএটি কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও রাসায়নিক উপাদান বাতাসে মিশে গিয়ে পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে। এতে বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে যা তাদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
এদিকে, ঢাকার আশেপাশে প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯২% শিশুর মুখের লালায় উচ্চ মাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে। এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর যা ভবিষ্যতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
তাছাড়া, তামাক পাতা আনা-নেয়া এবং উৎপাদিত তামাক পণ্য সারাদেশে পরিবহনের কাজে বড় বড় ট্রাক-লরির আগমনে মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় সড়কে নিয়মিতভাবেই ব্যাপক চাপ পড়ছে। এতে যানজট, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ সৃষ্টি হচ্ছে যা বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, তামাক পণ্যের প্রচারণা নিষিদ্ধ। তবে, দি ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিএটি ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের অভিজ্ঞান রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে তামাক পণ্যের প্রচারণা চালাচ্ছে যা আইন লঙ্ঘন করে। এছাড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বিএটিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, 'আপনারা আইন মেনে চলেন, না হয় এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান'।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে তামাক কারখানাগুলো শহরের মাঝখান থেকে সরিয়ে স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। যেমন- ব্যাংককে ২০০ একর জমির একটি তামাক কারখানা বর্তমানে একটি পাবলিক পার্কে রূপান্তরিত হয়েছে। এছাড়া, গ্রীসের এথেন্সের একটি তামাক কারখানা সংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে বিএটি কারখানা সরানোর মাধ্যমে পরিবেশগত ও সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। এটি সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও জনগণের স্বাস্থ্যের উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে।
এসইউ