
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে চর এলাকার বিভিন্ন ফসল হাটু পানিতে ডুবেছে। বিশেষ করে বাদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে হাঁটু পানিতে ডুবে আছে চরাঞ্চলের কৃষকের উঠতি ফসল।
শনিবার (১৭ মে) বিভিন্ন তিস্তা চরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজের উজানে ভারত এবং বাংলাদেশ অংশে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে নীলফামারীর ডালিয়াস্থ দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়ায় নিম্নাঞ্চলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
তবে ডালিয়াস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছেন, গত ৪ দিনে নদীতে একশত সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এখনও পানি বিপৎসীমার (৫২.১৫) শনিবার (১৭ মে) দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়ায় ৫১ ও কাউনিয়ায় ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃস্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১৪৩ মিলিমিটার। এর মধ্যে কাউনিয়া পয়েন্টে ৯৯ মিলিমিটার ও ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪ মিলিমিটার।
সূত্র জানায়, উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীতে ঢল নেমেছে। নদীর পানির চাপে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে নদীর পানি পরিমাপের গেজটি ভেসে যায়। ফলে সেখানে নতুনভাবে গেজ স্থাপন করেছেন বাপাউবো।
এদিকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া উপজেলার তালুক সাহাবাজ চর, ঢুষমারা নীচু চরপীরগাছা উপজেলার নীচু শিবদেব এলাকার বাদাম চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। তিস্তার পানিতে তলিয়ে আছে বাদাম ক্ষেত। এ নিয়ে বাদাম চাষিরা স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘বাদাম নিয়্যা খুব মসিবতে (কষ্টে) আছি। চরের সোগ (সব) বাদাম নষ্ট হয়্যা গেইছে। এ্যলাও পানির দেড়-দুই ফুট নিচোত বাদাম আছে। কিছু বাদাম তুলবার পারছি কিন্তু শুকাবার (শুকানো) পারছি না। অসময়ে তিস্তার পানিত হামার অনেক লোকসান।’
বাদাম চাষি ফয়জুর রহমান জানান, ঋণ করে এবার প্রায় ২৫০ শতক জমিতে বাদাম চাষ করেন তিনি। সেই বাদাম তুলে ঋণ পরিশোধ করাসহ বাড়ির কিছু কাজ আর নতুন ফসলের বীজ কেনার চিন্তাভাবনা ছিল তার মনে। কিন্তু হঠাৎ তিস্তায় হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় তলিয়ে গেল তার বাদাম ক্ষেত।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নীলফামারীর, ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, লালমনিরহাট সদর, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের নীচু এলাকাগুলোতে পানি ঢুকে পড়ে বাদাম ক্ষেতের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছে। শুধু বাদাম নয়, বাদামের সাথে চরের জমিতে থাকা মিস্টি কুমড়ার ক্ষেতগুলোও তলিয়ে রয়েছে বলে জানান চরবাসীরা।
রংপুর কৃষি অঞ্চল অফিস সূত্র জানায় খরিপ-১ (চলতি মৌসুম) তিস্তা নদীর চর এলাকা সহ ৫ জেলায় বাদাম চাষ হয় ৫ হাজার ২২৯ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫৫ হেক্টর কম আবাদ হয়। খরিপ-১ মৌসুমে লালমনিরহাটে ১ হাজার ৮৭০ হেক্টর, রংপুরে ১ হাজার ৩৯০ হেক্টরে, নীলফামারীতে ৯৭৯ হেক্টরে, কুড়িগ্রামে ৯১২ হেক্টরে ও গাইবান্ধা জেলায় ৭৯ হেক্টরে বাদাম চাষ হয়।
এর আগে চলতি বছরের রবি মৌসুমে ৫ হাজার ৬৭৯ হেক্টরে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে ১১ হাজার ৯২৮ মেট্রিকটন বাদাম উৎপাদন হয়েছিল বলে জানান, রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক আফজাল হোসেন।
মিরাজ খান