
ছবি : সংগৃহীত
আজ ১০ ই মে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস। পরিযায়ী পাখির আবাসস্থলকে নিরাপদ রাখা এবং পাখিদের বিচরণস্থল সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর মে ও অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শনিবার বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস (World Migratory Bird Day) পালিত হয়।
পরিযায়ী পাখিকে পরিব্রাজক বা যাযাবর পাখিও বলা হয়। পরিযায়ী পাখি বলতে সাধারণভাবে আমরা বুঝি, যারা শীতের সময় বহু পথ পেরিয়ে আমাদের দেশে আসে এবং কিছুদিন অবস্থান করে।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, পরিযায়ী প্রজাতি বলতে সেই বন্যপ্রাণীদের বোঝায় যারা এক বা একাধিক দেশের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে চলাচল করে থাকে।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের উপর, আর এর সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা। প্রতি বছর কোটি কোটি পরিযায়ী পাখি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাড়ি জমায় নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্যের সন্ধানে। তবে বর্তমান জলবায়ু সংকট এবং মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড—যেমন বনভূমি উজাড়, জলাভূমি ভরাট, দখল ও দূষণের কারণে এই পাখিদের স্বাভাবিক আবাসস্থল হুমকির মুখে পড়ছে। ফলে পরিযায়ী পাখিদের টিকে থাকা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকেই বৈশ্বিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস (World Migratory Bird Day)।
পরিযায়ী পাখিদের অনেকেই আগে 'অতিথি পাখি' নামে পরিচিত ছিল, তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে—তারা স্বল্প সময়ের জন্য নয়, বরং দীর্ঘ সময় ভিনদেশে থেকে ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায় এবং প্রজনন শেষ করে তবেই ফিরে যায়। অর্থাৎ, তারা নতুন দেশে শুধু অতিথি নয়, বরং স্থায়ীভাবে কিছুটা সময়ের জন্য বসবাসকারী। একারণে তাদের আঞ্চলিক বাসস্থান হিসেবেও বিবেচনা করা উচিত।
বাংলাদেশেও প্রতিবছর শীতকালে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আসে। হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, সুন্দরবন, পটুয়াখালীর চরাঞ্চল ও চট্টগ্রামের কিছু জলাভূমি পরিযায়ী পাখিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যস্থল। তবে এসব এলাকায় চোরাশিকার, জলাশয় দখল ও দূষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে এ পাখিদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিযায়ী পাখি শুধু সৌন্দর্য নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা বীজ ছড়ানো, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। তাই তাদের রক্ষা করা মানে প্রাকৃতিক পরিবেশকেই রক্ষা করা।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন, এই পাখিদের টিকিয়ে রাখতে হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সচেতনতা, আইনি প্রয়োগ এবং বাসস্থান সংরক্ষণ জরুরি। এ দিবসটি সেই সচেতনতা তৈরির একটি বড় প্ল্যাটফর্ম।
সা/ই