ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

পাখির বাসায় প্লাস্টিকের স্তর: আবর্জনায় ঢাকা মানব ইতিহাস

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ৭ মে ২০২৫; আপডেট: ০২:৫২, ৭ মে ২০২৫

পাখির বাসায় প্লাস্টিকের স্তর: আবর্জনায় ঢাকা মানব ইতিহাস

ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের বিজ্ঞাপন, ফাস্টফুডের মোড়ক, কোভিড-১৯ মাস্ক নিদর্শনগুলোর সব একটি পাখির বাসায় পাওয়া গেছে। সময় বদলে গেলেও রয়ে গেছে প্লাস্টিক। আর সেই প্লাস্টিক দিয়েই পাখিরা গড়ছে তাদের বাসা, রেখে যাচ্ছে এক অভিনব মানব ইতিহাসের দলিল।

লন্ডনের একটি কুট (coot) পাখির বাসায় টুকরো টুকরো ডালপালা আর প্লাস্টিকের আবর্জনা। ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই গোলগাল, কালো পানিপাখি শহরাঞ্চলে বাধ্য হয়ে বাসা বানাতে ব্যবহার করছে বিশেষত প্লাস্টিকসহ যাই পাচ্ছে।

নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক কাহিনি, যেখানে আমস্টারডামের লালবাতি এলাকায় কুট পাখির একটি বিশাল বাসা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন ত্রিশ বছরের প্লাস্টিকের স্তর। সেখানে ছিল ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ‘মার্স বার’-এর বিজ্ঞাপন মোড়ক থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক প্রোটিন বার-এর প্যাকেট পর্যন্ত প্রমাণ, এই পাখিরা এত বছর ধরে এই শহরের বুকেই বেঁচে আছে, বংশবিস্তার করছে।

এছাড়াও বাসাটিতে পাওয়া গেছে ক্যান্ডি র‍্যাপার, ম্যাকডোনাল্ড’স স্যান্ডউইচ মোড়ক ও কোভিড-১৯ সময়কার সার্জিক্যাল মাস্ক। একই ধরনের মাস্ক পাওয়া গেছে আরও কয়েকটি বাসাতেও।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন নেদারল্যান্ডসের Naturalis Biodiversity Center এর জীববিজ্ঞানী আউকে-ফ্লোরিয়ান হিমসত্রা। তাঁর মতে, কেবল পাখির আচরণ নয়, এই বাসাগুলোর ‘প্লাস্টিক স্তর বিশ্লেষণ’ করে বোঝা যায় মানুষের ব্যবহারিক পরিবর্তন, শহরের ইতিহাস অর্থাৎ মানবতার এক অনন্য দলিল।

আমস্টারডামের মতো শহর যেখানে কনক্রিটের খাল, পর্যটকে ভরা রাস্তা, গাছপালা কম সেখানে কোনো পাখির থাকার কথা না। তবুও আশির দশকে কিছু সাহসী কুট পাখি ঢুকে পড়ে শহরের গভীরে।

তারপর তারা থেকে যায়। বাসা বানাতে শুরু করে যা-ই পায় তা দিয়েই ফুড র‍্যাপার, কনডম এমনকি পলিথিনের টুকরো। এখন আমস্টারডামে অন্তত ২০০টি কুট পাখি আছে বলে জানান এক গবেষক। তাদের এলোমেলো বাসা ছড়িয়ে আছে সব জায়গায়, যা স্থানীয়দের জন্য বেশ বিরক্তির।

গবেষকরা এখন খতিয়ে দেখছেন এই নগরায়ণ কি আসলে পাখিদের জন্য ভালো? তারা যেমন মানিয়ে নিচ্ছে শহরের সঙ্গে, তেমনি শহরের ইতিহাসও জমছে তাদের তৈরি বাসার স্তরে স্তরে।

সূত্র: https://www.nationalgeographic.com/

রবিউল

×