
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার প্রকৃতপক্ষে কোন না কোনভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছেন কি না? এটা নিয়ে তো জনগণের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিতেই পারে, সংশয় দেখা দিতেই পারে। জনগণের মধ্যে সেই সংশয় তৈরি হয়েছে।
আজ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ (সাবেক বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ)-এর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আজকে অন্তর্বর্তী সরকার অনেক কথা বলছে, বিগত ১৬ বছর রাত নাই, দিন নাই, একটা ভয়ঙ্কর আতঙ্কের মধ্য দিয়ে ছুটে বেড়াতে হয়েছে। বিশ্বাস ছিল একটা দায়িত্বশীল সরকার আসবে, যারা জনগণের নিরাপত্তা দেবে। শেখ হাসিনার আমলে যেমন মানুষ রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশকে ভয় পেত, সেটি পাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সংস্কার তো স্ট্যাটিক বিষয় না, সংস্কার তো ঐতিহাসিক বটগাছ নয়, যে যেটা দুলবে না, নড়বেও না। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। এখন যে সংস্কার চলছে, এটি হয়তো আবার ৫০ বছর পর সংস্কার করতে হবে। এটাই তো আইন। আইন আপডেট হবেই। আপডেট মানেই তো সংস্কার।নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের জন্য কাজ করে কারণ পরে বার নির্বাচনে কাজ না করলে প্রতিক্রিয়া হয়।
তিনি বলেন, বিএনপি কিছু বললেই কথা শুরু হয়, বিএনপি তো ১৬ বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছে, মার খেয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের রক্ত ঝরানোর নীতির মুখোমুখি হতে নেতাকর্মীরা সংগ্রাম করেছে। তারপরও তো আমরা চাচ্ছি, সরকারকে তো সময় দেয়া হচ্ছে, ঠিক আছে আপনারা প্রয়োজনীয় সংস্কার করুন। কিন্তু আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) সে কাজটুকুও করেনি, করতে চাচ্ছেন না, অথবা আপনাদের মনোভাব কী আছে সেটাও বলতে পারছেন না। আপনারা নির্বাচনের একটা তারিখ ঘোষণার ক্ষেত্রেও গড়িমসি করছেন। এটাই হচ্ছে সন্দেহের কারণ, এটা নিয়ে জনগণ সন্দেহ করছে, মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন,আমরা তার পরিস্থিতি দেখছি, হত্যা মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি চলে যাচ্ছে, সরকার নাকি কেউ জানে না। অথচ শেখ হাসিনার আমলে গুম হওয়া সুমনের খোঁজে তার বাসায় গেছে পুলিশ। অথচ দুবার রাষ্ট্রপতি খুনের আসামি উধাও হয়ে যায়, অদ্ভুত! এটা যে সরকার জানে না, তা নয়, সরকার প্রকৃতপক্ষে কোন না কোনভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছেন কি না? এটা নিয়ে তো জনগণের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিতেই পারে, সংশয় দেখা দিতেই পারে। জনগণের মধ্যে সেই সংশয় তৈরি হয়েছে।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার ভয়াবহ দানবীয় দুঃশাসনের মধ্যে যিনি মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলে গেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশ ছেড়ে যাননি, মাটি ছেড়ে যাননি তার নামই ছিল এই মেডিকেল কলেজ (বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ)।
প্রতিহিংসার যে কত লেলিহান ও লালসা শেখ হাসিনার মধ্যে ছিল, প্রমাণ সে বেগম খালেদা জিয়ার নামটাও রাখতে দেয়নি।
তিনি বলেন, আপনারা যদি পটুয়াখালীতে যান, দেখবেন, একটা শেখ হাসিনা সেতু, পরেরটা শেখ রেহানা সেতু, পরেরটা শেখ জামাল সেতু, শেখ কামাল সেতু, শেখ রাসেল সেতু, গোটা দেশটা তিনি (শেখ হাসিনা) বাপের জমিদারি মনে করতেন। অথচ দেশের বর্ষীয়ান ও বরেণ্য রাজনীতিবিদ (বেগম খালেদা জিয়া) কে কী কষ্ট দিয়েছেন, তার নামটা মুছে ফেলেছেন।
আরও বলেন, ছাত্রদের গুণগত মান উন্নয়ন করতে পারলেই বৈদেশিক ডলার অর্জন করতে পারব। ভারতীয় বছরে ২০ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য যেত। অবাক হই, গণমাধ্যমে দেখি, রোগীরা আসলেও চেকআপ মেশিন নষ্ট মফস্বল হাসপাতালগুলোতে। ঢালাওভাবে চিকিৎসকদের দোষারোপ করা যাবে না।
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, 'স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে এখনো বৈষম্য বিদ্যমান। এখনো পোস্টিং বাণিজ্যসহ সকল কিছু স্বৈরাচারের দোসররা করে যাচ্ছে। আমাদের আদর্শের ডাক্তারদের ওপর নিপীড়ন করে যাচ্ছে।
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়ালের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহ পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক কবির আল লাবু, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, কবি রেজা উদ্দিন স্টালিন প্রমুখ।
আফরোজা