ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

৫০ বছর পর সোভিয়েত মহাকাশযান পৃথিবীতে ভূপাতিত

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ১০ মে ২০২৫; আপডেট: ১৯:৫৫, ১০ মে ২০২৫

৫০ বছর পর সোভিয়েত মহাকাশযান পৃথিবীতে ভূপাতিত

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৫৩ বছর মহাকাশে ঘুরে বেড়ানোর পর পৃথিবীতে ফিরে এসেছে এক সোভিয়েত মহাকাশযান কসমস-৪৮২। শনিবার সকাল ৯:২৪-এ (মস্কো সময়) এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার পশ্চিমে ভারত মহাসাগরে ভূপাতিত হয় বলে নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস।

এই যানটি মূলত শুক্র গ্রহে অবতরণের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল। তবে ১৯৭২ সালের ৩১ মার্চ উৎক্ষেপণের পর এক বুস্টার অকালে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এটি পৃথিবীর কক্ষপথেই আটকে পড়ে।

এই মহাকাশযানের ফিরে আসা ছিল ঠাণ্ডা যুদ্ধের যুগের এক স্মারক, যখন বিশ্বের দুই সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সৌরজগৎ জয় করার স্বপ্নে বিভোর ছিল।

“এটা সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশ অভিযানে আগ্রহী ছিল আর আমরা সবাই হয়তো তখন মহাকাশ নিয়ে বেশি সাহসী ছিলাম,” বলেন জোনাথন ম্যাকডাওয়েল, হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান অ্যাস্ট্রোফিজিক্স সেন্টারের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

শুক্র অভিযানে সোভিয়েতের ঐতিহাসিক পদচিহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র যখন চাঁদ জয়ের দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন নজর রেখেছিল শুক্র গ্রহের দিকে। ভেনেরা প্রোগ্রামের আওতায় ১৯৬১ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তারা মোট ২৯টি মহাকাশযান পাঠায় শুক্র অভিযানে। এর মধ্যে অনেকগুলো ব্যর্থ হলেও ডজনখানেক সফল হয়। এই অভিযানে তারা শুক্রের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করে, মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এবং পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো সেই গ্রহের পৃষ্ঠের ছবি পাঠাতে সক্ষম হয়।

“কসমস-৪৮২ সেই অভিযানের একটি চিহ্ন — এক সময়ের দুঃসাহসী বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার স্মৃতিচিহ্ন,” বলেন ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ আসিফ সিদ্দিকি।

ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়া "স্পেস বল"

যানটির প্রথম অংশ ভূপাতিত হয়েছিল ১৯৭২ সালের ৩ এপ্রিল নিউজিল্যান্ডের অ্যাশবার্টনে। রাত ১টার দিকে কয়েকটি ৩০-পাউন্ড ওজনের টাইটানিয়াম স্ফিয়ার পড়ে সেখানকার একটি শালগমের খেতে। সেগুলো ছিল সৈরিক ভাষায় চিহ্নিত এবং রীতিমতো আতঙ্ক ছড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে। একটিকে পুলিশ হেফাজতে রাখতে হয়েছিল, কারণ কেউ বুঝতেই পারেনি, এটা কী!

যদিও আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইন অনুযায়ী, মহাকাশ বস্তুর মালিকানা উৎক্ষেপণকারী রাষ্ট্রেরই থাকে, তবুও সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন এই ‘স্পেস বল’-এর মালিকানা দাবি করেনি। পরে সেই বলগুলো আবার কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

সফল ভাই: ভেনেরা ৮

কসমস-৪৮২ যাত্রা ব্যর্থ হলেও, এর যমজ মহাকাশযান ভেনেরা ৮, কয়েকদিন আগে উৎক্ষেপণ হয়ে সফলভাবে শুক্র গ্রহে অবতরণ করে। এটি ৫০ মিনিট ধরে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে তথ্য পাঠাতে সক্ষম হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে উৎক্ষেপিত ভেনেরা ৯ ও ১০ ধীরে ধীরে গ্রহের পৃষ্ঠে নেমে আসে এবং পাঠায় শুক্রের হলদেটে, মৃতপ্রায় ভূপ্রকৃতির ছবি।

সোভিয়েত ভেনেরা প্রোগ্রাম ১৯৮০-এর দশকে ভেগা মিশন দিয়ে শেষ হয়। এই অভিযানে তারা শুক্রে ল্যান্ডার নামিয়ে হ্যালির ধূমকেতুর পাশ দিয়ে উড়ে গিয়েছিল।

“ভেনেরা মিশনের সফলতা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য গর্বের বিষয়,” বলেন ড. ক্যাথলিন লুইস, স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামের কিউরেটর।

এখনো মহাকাশে ঘুরছে ইতিহাস

আজও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বেসরকারি সংস্থা অসংখ্য উপগ্রহ ও যান মহাকাশে পাঠাচ্ছে, যেগুলোর অনেকই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে।

“রোজ বহুবার এমন রি-এন্ট্রি হচ্ছে, বেশিরভাগই নজরে আসে না,” বলেন স্পেস ডেব্রিস বিশেষজ্ঞ গ্রেগ হেনিং। সূর্য যখন বেশি সক্রিয় থাকে, তখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল প্রসারিত হয় এবং কক্ষপথের বস্তুগুলোর ওপর ঘর্ষণ বেড়ে যায়।

কখনো কখনো কিছু রি-এন্ট্রি দৃষ্টিনন্দন আলোর খেলা তৈরি করে, আবার কিছু বেশ বিপজ্জনকও হতে পারে। যেমন চীনের লং মার্চ ৫বি রকেট, যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে।

“কসমস-৪৮২ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা মহাকাশের এক যাদুঘর বানিয়ে ফেলেছি এবং মাঝে মাঝে সেই যাদুঘরের জিনিসপত্র আমাদের মাথার ওপর পড়ে যায়,” মন্তব্য করেন ড. সিদ্দিকি।

সূত্র: https://www.nytimes.com/2025/05/10/science/kosmos-482-crash-soviet-spacecraft.html?smid=whatsapp-nytimes

রবিউল

×