
আলো আঁধারের মাঝেও মায়ের ভালোবাসা সবসময়ই আলো হয়ে থাকে - রিজওয়ান করিম
বিশ্ব মা দিবস আসে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে, একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে—মা যেন কেবল একটি সম্পর্ক নয়, এক গভীর অনুভব, এক নিঃশর্ত ভালোবাসার নাম। ২০২৫ সালে দিনটি পড়েছে ১১ই মে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিনটি উদযাপিত হচ্ছে নানা আয়োজনে। তবে এ যুগের মা দিবস উদযাপনের ধরন যেন এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে—ভালোবাসা কি এখন শুধুই স্ট্যাটাসে সীমাবদ্ধ?
আজকের তরুণ সমাজ মা দিবস মানেই ধরে নিচ্ছে ফেসবুকে একটি পোস্ট, সঙ্গে হয়তো পুরনো কোনো ছবিতে “লাভ ইউ মা” লেখা কিছু শব্দ, মিউজিক রিল আর একগাদা ইমোজি। অথচ মায়ের ফোন রিসিভ না করা, তাঁর শরীর খারাপ থাকলে পাশে না থাকা, কিংবা মাসের পর মাস গ্রামের বাড়িতে খোঁজ না নেওয়া—এই চিত্রগুলো কিন্তু বাস্তব।
ফেসবুকে ভালোবাসা দেখানোর প্রবণতা এখন অনেকটাই 'পারফর্মেটিভ' — অর্থাৎ অন্যদের দেখানোর জন্য করা হয়। অথচ মা, যিনি ফোনে কেবল একটি খোঁজ নিতে চান, হয়তো দিনের পর দিন তাকিয়ে থাকেন সন্তানের আগমনের অপেক্ষায়। তিনি এই 'পাবলিক পোস্ট'-এর চেয়ে অনেক বেশি চায় সন্তানকে পাশে পেতে।
একদিকে প্রযুক্তির আশীর্বাদে আমরা দূরে থেকেও অনুভব ভাগ করে নিতে পারি, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে ভালোবাসা যদি কেবল ভার্চুয়াল থাকে, তার মুল্য কতটা স্থায়ী? অনেকে এখন “মা দিবস উপলক্ষে মাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলাম” — এমন ছবি পোস্ট করে, কিন্তু সেই মায়ের চোখে থাকে সন্তানের সাথে গভীর কথা বলার আকাঙ্ক্ষা, যা থেকে যায় অপূর্ণ।
আমাদের প্রয়োজন এখন ভারসাম্য আনা—ভালোবাসা শুধু স্ট্যাটাসে নয়, বাস্তবে মায়ের হাতে হাত রাখার মধ্যে, তাঁর গল্প শোনার মধ্যে, কিংবা চুপচাপ পাশে বসে থাকার মধ্যেও প্রকাশ পাক। মা দিবসে একটি পোস্ট ভালোবাসা প্রকাশের শুরু হতে পারে, তবে সেটি যেন শেষ না হয় ডিজিটাল আলোয়।
মা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সবচেয়ে নিখুঁত রূপ হলো “মা”। তাই আসুন, ভালোবাসা কেবল ক্যাপশনে নয়—আচরণে, সময়ে, ও নিরন্তর যত্নে প্রকাশ করি। কারণ একটিবার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারা, হাজারো লাইক-কমেন্টের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এসইউ