
দেশের নিম্ন-মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিধবা নারীসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে থাকেন। বর্তমানে দেশে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) দেখানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে, সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন সীমিত ও মধ্যম আয়ের মানুষ। অনেকের করযোগ্য আয় না থাকা সত্ত্বেও শুধু সঞ্চয়পত্র কেনার কারণে তাদের প্রতিবছর রিটার্ন জমা দিতে হয়। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর পিএসআর দেখানোর বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া কিংবা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে, শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদ জমা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন আগ্রহী গ্রাহকরা। এর মাধ্যমে আগের মতো সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া সহজ হয়ে উঠবে।
সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ নিয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ ঋণের একটি অংশ সংগ্রহ করা হয় ব্যাংক খাত থেকে। আরেকটি বড় উৎস সঞ্চয়পত্র। গত জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফার হার বাড়িয়েছে সরকার। মুনাফা বৃদ্ধির পর সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে প্রায় এক বছর ধরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। উল্টো সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। ফলে, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট বা প্রকৃত ঋণ নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। এগুলো হলো- পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। শুধু নারীরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। সঞ্চয়পত্র ছাড়াও বর্তমানে ৪৫টি সরকারি-বেসরকারি সেবা গ্রহণে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বা পিএসআর দাখিল বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা বাড়াতে এই উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
দেশে অনেক বিধবা নারী আছেন, যারা সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভরশীল। তাদের করযোগ্য আয় না থাকার পরও রিটার্ন জমা দিতে হয়। আবার অনেক অবসরভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী শেষ বয়সের সম্বল হিসেবে সঞ্চয়পত্রের ওপর ভরসা করেন। তাদের প্রতিবছর শূন্য রিটার্ন জমা দিতে হয়। রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে তাদের অনেককে অযথা নানা হয়রানির মুখে পড়তে হয়। এমতাবস্থায় সঞ্চয়পত্র ক্রয় প্রক্রিয়া সহজ করার লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হলে তা নিঃসন্দেহে এনবিআরের একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এতে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবেন।
প্যানেল