
ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ রাশেদুল হকের কবরটি আজ বিলুপ্তির মুখে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড চর কাঠগিরি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। বন্যা ও নদীভাঙনের আশঙ্কায় দিন গুনছে রাশেদুলের শায়িত সেই কবর। পরিবার বলছে কবরটি সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়বে শহীদের শেষ চিহ্ন।
রাশেদুলের মা আলেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলেটাকে তো গুলি করি মারি ফালাইছে। শেষ আশ্রয়টুকু আছে শুধু ওর কবর, সেটাও যদি না থাকে, মুই আর কোডে যায়য়া কান্দিম?’ রাশেদুলের বাবা বাচ্চু মিয়া জানান, প্রতি বছর বন্যায় গ্রামে পানি ওঠে। কবরস্থানটিও নিচু হওয়ায় ভাঙনের ঝুঁকি প্রবল। পরিবার নিজের সামর্থ্যে কবরটি ঘিরে রাখার চেষ্টা করলেও তেমন কিছু সম্ভব হয়নি। শুধু রাশেদুলের পরিবার নয়, গ্রামের অনেকে বলছেন এই কবর শুধু একজন ব্যক্তির নয়, এটি একটি প্রতিবাদের, একটি শহীদের স্মৃতি। গ্রামের বাসিন্দা ফরজুল্লাহ ফরায়েজি বলেন, ‘এই কবরটা আমাদের গর্ব। কিন্তু যদি কবরই না থাকে, পরবর্তী প্রজন্ম জানবে কীভাবে, কে ছিল রাশেদুল?’ পরিবারের দাবি, সরকার যেন কবরটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় উঁচু করে দেয় মাটি, দেয় পাকা ঘেরা। যেন বন্যা এলেও শহীদের স্মৃতি অটুট থাকে। উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত রাশেদুল হক এখনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির অপেক্ষায়। পরিবার পেয়েছে সামান্য কিছু সহায়তা, কিন্তু আজও মেলেনি বিচার, মেলেনি স্থায়ী কোনো সুরক্ষা। এই কবর শুধু একটি দেহাবশেষ নয় এটি রাষ্ট্রের কাছে এক অনুরোধ, এক প্রশ্ন ‘যার জীবন আন্দোলনে গেল, তার শেষ ঠিকানাটুকু অন্তত রক্ষা করা হবে তো?’ এ বিষয়ে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘শহীদ রাশেদুলের কবরের বিষয়ে আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম, খোঁজ নিয়ে কবরটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্যানেল