
.
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যে জাতীয় সনদ তৈরি করতে সচেষ্ট আছে, নিঃসন্দেহে তা নাগরিকের সব অধিকার সুরক্ষিত করতে পারবে। দেশের নাগরিকদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়া একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বা রাষ্ট্র নির্মাণ কিংবা নাগরিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
শনিবার ঢাকায় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের আলোচনার শুরুতে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে ছিলেন- ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই কেবল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সুবিচার ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে পারে।’
প্রথমবারের মতো সবাই মিলে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংস্কার কমিশনগুলো থেকে যেসব প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে এবং জাতির সামনে প্রকাশ করা হয়েছে তার লক্ষ্য হলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সুনির্দিষ্ট পথ তৈরি করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহু প্রাণের বিনিময়ে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে সফল করার জন্য সবাইকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং প্রত্যাশা থাকবে, সব রাজনৈতিক দল এই আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে অগ্রসর হবে।’
আলোচনায় ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদলে দলটির সদস্য সুনয়ন চাকমা এবং সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন। ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টসহ এ পর্যন্ত ২৮টি রাজনৈতিক দল কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
গণফোরামের সঙ্গে বৈঠক ॥ সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গণফোরামের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এই সভা হয় বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।
আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে চাই যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত করবে, প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা থাকবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ক্ষমতার এক কেন্দ্রীকরণের জন্য নয় বরং বিকেন্দ্রীকরণের জন্য কাজ করবে।
তিনি আরও বলেন, গত ৫৩ বছর ধরে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের ক্ষেত্রে যে ব্যত্যয় রয়েছে, সকলে মিলে এই ব্যত্যয়গুলো মোকাবিলা করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। গণতন্ত্রের পথে যে নতুন যাত্রার সুযোগ পেয়েছি, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা কাজে লাগাতে হবে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে দলের সভাপতি পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী, একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর, অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগমসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল আলোচনায় অংশ নেন।