
ছবি: সংগৃহীত
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে গত এক বছরে বন, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত হয়েছে একের পর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বনের জমিতে সরকারি প্রকল্প স্থাপনের পুরোনো সিদ্ধান্ত বাতিলের ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের ৭০০ একর জমি এবং বাফুফের জন্য নির্ধারিত ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সোনাদিয়ার ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি ও জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নামে বন্দোবস্ত ১৫৫ দশমিক ৭০ একর জমিও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। আগস্ট ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত ৫ হাজার ০৯৩ একর বনভূমি উদ্ধার করে সেখানে পুনরায় বনায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
চুনতি বন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় ৩৭ হাজার ১৮২ একর জমি থেকে আকাশমনি গাছ সরিয়ে প্রাকৃতিক বন ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। মধুপুর ও শেরপুরেও আকাশমনি গাছ সরিয়ে বনকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে হাতির করিডোর পুনরায় কার্যকর হয়।
বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি ময়ূর ফিরিয়ে আনাসহ সাম্বার, কালোমুখ প্যারা পাখি, উল্লুক ও হাতির সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে সফল উদ্যোগ। মানুষের সাথে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দ্বন্দ্ব নিরসনে ১৫৯টি ইআরটি টিম গঠন ও জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল এবং ক্যাপটিভ হাতি সংরক্ষণের অভয়ারণ্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর বিল জোয়ানা ও বিল ভেলাসহ কয়েকটি জলাভূমিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা এবং অন্যান্য এলাকায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। বন্যপ্রাণী আইন সংশোধন ও ট্রাস্ট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট ২৯৩টি অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৬৮৪টি প্রাণি উদ্ধার করেছে। সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া লেমুরও উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বন্যপ্রাণী ও বৃক্ষ নিধনের অপরাধে কারাদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্যালিপটাস ও একাশিয়া গাছের চারা উৎপাদন, বিপণন, রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং নার্সারির এসব গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে 'গাছ থেকে পেরেক তুলে ফেলা' কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং দেশে প্রথমবারের মতো নেচার লার্নিং সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করে বন, বন্যপ্রাণী ও শব্দদূষণ রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় উদ্যান, ইকোপার্ক ও উদ্ভিদ উদ্যানে প্লাস্টিক ও বনভোজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূর্বাচলের ১৪৪ একরকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণে নেওয়া উদ্যোগসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ঢাকার শপিংমলসমূহে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা এবং কাঁচাবাজারে অভিযান জোরদার করা। বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ সহজলভ্য করতে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান’ প্রণয়ন ও ৮৩০টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ১৮টি অবৈধ সীসা কারখানা বন্ধ এবং ঢাকার সাভার-আশুলিয়াকে ডিগ্রেডেড এয়ারশেড হিসেবে ঘোষণা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিআরটিএ’র সহায়তায় পুরনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
শব্দদূষণ রোধে তরুণদের সম্পৃক্ত করে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়েছে। গাজীপুরে গাছা খাল দূষণের অভিযোগে ৯টি কোম্পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও সকল পলিথিন কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য BEST প্রকল্পের আওতায় নতুন কার্যক্রম অনুমোদনসহ ৩৭টি ভবন নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৬টি জেলা থেকে পাহাড়ের দাগ-খতিয়ান সংগ্রহ করে অনলাইনে তালিকাভুক্ত করার কাজ চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৩৫১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্প অনুমোদন এবং ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিবেশ ও বন রক্ষায় ৮টি আইন, বিধিমালা ও নির্দেশিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলমান রয়েছে।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়ায় চলমান অগ্রযাত্রায় সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
ছামিয়া