ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ছাত্রদের ওপর গুলি, থানার সামনে দাঁড়িয়ে দম্ভ দেখালেন মামলার আসামি দেলোয়ার

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ৭ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪০, ৭ আগস্ট ২০২৫

ছাত্রদের ওপর গুলি, থানার সামনে দাঁড়িয়ে দম্ভ দেখালেন মামলার আসামি দেলোয়ার

ছবি: সংগৃহীত

যে ব্যক্তি জুলাইয়ে ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেই মামলার সংশ্লিষ্ট রামপুরা থানার সামনে। যেন কোনো ভয় বা সংকোচ নেই, উল্টো ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে ছবি তুলে তা পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে ক্যাপশনে লিখেছেন ‘রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। অফিসার ইনচার্জ খুবই আন্তরিক ছিলেন, সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। তবে আমাকে যদি কেউ গ্রেপ্তার করে, তার চাকরি থাকবে না।’ ছবিটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর আলোচনায় উঠে আসে আরও বিস্ময়কর তথ্য। 

রামপুরা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ৩৯ নম্বর আসামির তালিকায় রয়েছে দেলোয়ারের নাম। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, দেলোয়ারের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। তার বাবা আব্দুর রহমান ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী শ্রমিক লীগের নেতা। আগে সাভারে বসবাস করতেন দেলোয়ার, সেখান থেকেই আন্দোলন দমনকারী হিসেবে মাঠে নামেন। আহত হওয়ার পর নিজের পরিচয় পাল্টে আন্দোলনকারীর মুখোশ পরেন। এরপর ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে সরকারি সুবিধা ভোগ করেন। শুধু ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর দায় নয়; দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। জবরদখল, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, এমনকি এসি বিস্ফোরণের মতো প্রাণঘাতী ব্যবসা সিন্ডিকেটেও তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভুয়া পরিচয়ে নিজেকে আন্দোলনে আহত যোদ্ধা হিসেবে তুলে ধরে সরকারের কাছ থেকে সুবিধাও নিয়েছেন।

রামপুরা থানার ওসি মোহাম্মাদ রাহাৎ খান বলেন, আমি দেলোয়ারের থানায় আসা কিংবা ছবি তোলার বিষয়ে কিছুই জানি না। তাকে গ্রেপ্তার করতে বাধা দেয়ার কথাও আমার জানা নেই। তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

রাজনৈতিকভাবে দেলোয়ারের ঘনিষ্ঠতা ছিল ঢাকার সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে। ঢাকা-১৬ আসনে তার সঙ্গে বিরোধ ছিল মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার মো. মান্নান কচির। অভিযোগ রয়েছে, কচি আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় ইলিয়াস মোল্লা নিজে ‘কৃতিত্ব’ নিতে মাঠে নামেন এবং দেলোয়ারকে রামপুরায় ছাত্রদের ওপর গুলি চালাতে নির্দেশ দেন। অভিযোগ রয়েছে, দেলোয়ার এসি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ব্রামার এক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত। নিম্নমানের কুলিং গ্যাস আমদানি করে তা বাজারে ছাড়েন। এসব গ্যাসে বিস্ফোরণ হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হলেও তদন্ত হয়নি। এই সিন্ডিকেটকে ছায়া দিয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক, ইলিয়াস মোল্লা ও পঙ্কজ দেবনাথ।

একাধিক ফোনালাপে দেলোয়ার বিএনপি-জামাতকে গালিগালাজ করতে শুনে গেছে। আরেক ফোনালাপে রাজধানীতে হাজার হাজার এসি, ফ্রিজ শ্রমিক জড়ো করার পরিকল্পনার বিষয়টি উঠে আসে। বিষয়টি ফাঁস হলে কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হন তিনি।

মিরপুরের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, আমি ঘটনার সময় কক্সবাজারে ছিলাম। এরপরও আমার নামে মামলা দেয় দেলোয়ার। পরে দেখা করে বলে, ৫ লাখ টাকা দিলে মামলা মিটমাট হয়ে যাবে। প্রতিবেশী জসিম উদ্দিন বলেন, শুনি দেলোয়ার আওয়ামীবিরোধী রাজনীতি করেন। কিন্তু সে ছাত্র আন্দোলন দমন করতেই মাঠে ছিল। আহতও হয়। এখন সে-ই আবার আন্দোলনের সমন্বয়ক! আর এখন মিথ্যা মামলা দিয়ে নাম বাদ দিতে টাকা দাবি করছে। 

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, থানার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা ব্যক্তি যদি এজহারভুক্ত আসামি হোন এবং ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। থানার সামনে দাঁড়িয়ে দেলোয়ারের তোলা ছবি  দিয়ে প্রতিবেদককে সহযোগিতাও করতে বলেন এই কর্মকর্তা।  

তবে দেলোয়ার হোসেন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমি রামপুরা থানায় জানতে গিয়েছিলাম, আমার নামে সত্যিই কোনো মামলা আছে কিনা। ডিউটি অফিসার বিষয়টি যাচাই করে আমাকে জানান, মামলা রয়েছে। এরপর আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি এবং ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। আমি নিজেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ে পরিচয় দিই। পরে ওসি সাহেব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ডেকে আমার মামলাটি কীভাবে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে বলেন। ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক ছিল না। সাংগঠনিক একটি অনুষ্ঠানে একবার দেখা হয়েছিল। অথচ ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে ব্যানার ও ফেস্টুনে থাকা তার নাম ও ছবির বিষয়ে কোন সদুত্তর দেননি।

আবির

×