ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ডিলারের হুমকি: ‘সার চাইলে ডিসি-ইউএনও-কৃষি অফিসারকে নিয়ে আসতে হবে’

মো: সামানুর ইসলাম, বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২১:১১, ৭ আগস্ট ২০২৫

ডিলারের হুমকি: ‘সার চাইলে ডিসি-ইউএনও-কৃষি অফিসারকে নিয়ে আসতে হবে’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের সার ডিলার গোফরান কৃষকদের ডিসি-ইউএনওকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। 

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের কৃষক ইসমাইল হোসেন। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুজন ডিলারের কাছে সার কেনার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে বার বার ঘুরেও সার পায়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে ডিলার বলেছেন, সার নিতে হলে ডিসি-ইউএনও-কৃষি অফিসারকে নিয়ে আসতে হবে। এরপরে বাড়ীতে ফিরে গেছেন তিনি। 

এমনি ভাবে তার মত বড়বাড়ী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সইফত উদ্দীন, দরবেশ আলীসহ শতাধিক কৃষক সার না পেয়ে ঘুরে গেছেন। এতে ব্যাঘাত তৈরি হয়েছে আমনধান চাষাবাদে। দুটো উপজেলা প্রশাসনের জব্দ করা সার কৃষকদের নিকট সরকারি মূল্যে বিক্রি করছেন কৃষি বিভাগের লোকজন।তবে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে জুলাই ও আগস্ট মাসের বরাদ্দ অনুযায়ী সার সংকট হওয়ার কথা নয়। কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। 

কৃষক ইসমাইল হোসেন জানান, বুধবার সকালে সার দিচ্ছে শুনে বড়বাড়ী ইউনিয়নের ডিলার রমজান আলীর কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেয়। বিকালে দিবে, সন্ধ্যায় দিবে বলে গুদাম ও দোকান বন্ধ করে চলে যায়। বৃহস্পতিবার তাকে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার বিকালে বড়বাড়ী ইউনিয়নের আরেক ডিলার গোফরানের কাছে সার দিবে। প্রথমে দুপুরে, এরপরে বিকালে, সবশেষ সন্ধ্যায় বলেন শুক্রবার সকালে আসতে। এখন চলে যাচ্ছি বাড়ীতে, সার মনে হয় পাবো না।

তার সাথে এসেছিলেন সইফত উদ্দীন, দরবেশ আলী। তারাও ফিরে গেছেন সার না পেয়ে। যাওয়ার সময় বলেন, কৃষকরাতো অসহায়, ডিলার যখন সার দিবে, তখন আসতে হবে। কাল ফজরের নামাজ পড়েই চলে আসবো। 

অভিযোগের বিষয়ে সন্ধ্যায় বড়বাড়ী ইউনিয়নের সার ডিলার গোফরানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন গুদাম খোলা যাবে না, আগামীকালকে আসতে বলেন। এ সময় কৃষকরা প্রতিবেদকের সামনে সকাল থেকে বসিয়ে রাখার কথা বলে আঙ্গুল তুলে তিনি জানান, সার নিতে হলে ডিসি-ইউএনও-কৃষি অফিসারকে নিয়ে আসতে হবে। তানা হলে সার দিবো না। 

এদিকে বড়বাড়ী ইউনিয়নের অপর ডিলার রমজান আলীকে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। 

কৃষকদের অভিযোগ, বরাদ্দকৃত সার ডিলাররা গোপনে খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। ডিলারদের কাছে সার না পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত মূল্যে অন্য ব্যবসায়ীদের নিকট সার পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে এসব সার আসছে কোথা থেকে, প্রশ্ন কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন সোহেল জানান, সরকার অনুমোদিত আটজন বিসিআইসি ডিলার ও ২৪ জন বিএডিসি ডিলারকে গত জুলাই ও চলতি আগস্ট মাসে ২৩৪০ মেট্টিক টন ইউরিয়া, টিএসপি ৩৬০ মেট্টিক টন, ডিএমপি ৮৪৮ মেট্টিক টন এবং এমওপি ১০৪০ মেট্টিক টন সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরপরেও যারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। 

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানান, সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি ডিলারদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন অভিযান শুরু করেছে। বুধবার রাতে ধনতলা ইউনিয়নের মেসার্স মহির উদ্দিন ট্রেডার্সের গুদামে অভিযান চালিয়ে ৭১৫ বস্তা সার জব্দ করে পরে কৃষকদের নিকট সরকারি মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। একই সাথে অবৈধ ভাবে মজুদের দায়ে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে ডিলারকে। 

'সার নিতে হলে ডিসি-ইউএনও-কৃষি অফিসারকে নিয়ে আসতে হবে' এ কথা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানাকে অবগত করলে তিনি বলেন, কৃষকদের হয়রানীর সুযোগ নেই। আমি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলছি। একই সাথে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে অবগত করার পরামর্শ দেন তিনি।

রাজু

×