ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

যে কারণে ৬৮ লাখ অ্যাকাউন্ট ডিলিট করেছে হোয়াটসঅ্যাপ, জানুন আপনি ঝুঁকিতে কিনা

প্রকাশিত: ২১:০২, ৭ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২১:০৩, ৭ আগস্ট ২০২৫

যে কারণে ৬৮ লাখ অ্যাকাউন্ট ডিলিট করেছে হোয়াটসঅ্যাপ, জানুন আপনি ঝুঁকিতে কিনা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে অনলাইন প্রতারণা রুখতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে জনপ্রিয় ম্যাসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই স্ক্যামিং বা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬৮ লাখেরও বেশি অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছে অ্যাপটির মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা। বিষয়টি গত বুধবার প্রকাশিত একটি ব্লগ পোস্টে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

মেটা জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ প্ল্যাটফর্মে প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য রোধে নেওয়া বহুমাত্রিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই এই অ্যাকাউন্টগুলো ডিলিট করা হয়েছে। তারা আরও জানায়, অনলাইনে পরিচালিত এসব স্ক্যামের বড় একটি অংশ চালানো হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন ‘স্ক্যাম সেন্টার’ থেকে, যেগুলো পরিচালিত হয় সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মাধ্যমে। এসব সেন্টারের নেপথ্যে রয়েছে মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশভিত্তিক চক্র, যারা সাধারণ ব্যবহারকারীদের ব্ল্যাকমেইল করে প্রতারণায় জড়িত হতে বাধ্য করে।

প্রতারণা প্রতিরোধে হোয়াটসঅ্যাপ ইতোমধ্যে বেশ কিছু নিরাপত্তামূলক ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখন থেকে কনটাক্ট লিস্টে না থাকা কেউ যদি কোনো ব্যবহারকারীকে গ্রুপে অ্যাড করে, তাহলে হোয়াটসঅ্যাপ নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেবে। এছাড়া স্ক্যামিংয়ের প্রচলিত কৌশল বিশ্লেষণ করে অ্যালগরিদমের মাধ্যমে সন্দেহজনক কার্যক্রম শনাক্তের কাজও চলমান রয়েছে।

মেটা আরও জানায়, অনেক স্ক্যামার ভুয়া বিনিয়োগ প্রকল্প, চাকরির প্রলোভন বা সহজ উপায়ে অর্থ উপার্জনের ফাঁদে ফেলে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের কেউ কেউ হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অথবা চ্যাটজিপিটি’র মতো এআই টুল ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদেরকে প্রভাবিত করে। এক কম্বোডিয়ান চক্র স্কুটার ভাড়া দেওয়ার ভুয়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিল। তারা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইক দিলেই অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিত।

প্রতারণার পেছনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও কৌশল ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। স্ক্যামাররা এখন অ্যাডভান্সড মেসেজিং কৌশল প্রয়োগ করছে, যার মাধ্যমে তারা প্রথমে ব্যবহারকারীর আস্থা অর্জন করে, তারপর ধীরে ধীরে তাকে অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে নিয়ে গিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। অনেক সময় এই লেনদেন ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যাতে অর্থের গতিপথ ট্র্যাক করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

মেটা ও হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্ক্যামিং রোধে তারা অগ্রিম সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে ব্লক করছে। তবে ব্যবহারকারীদের সচেতনতাও এই যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ব্যবহারকারীদের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সন্দেহজনক বার্তা এলে তা এড়িয়ে চলা, অচেনা লিংকে ক্লিক না করা এবং অবশ্যই অ্যাকাউন্টে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আপনি যদি হোয়াটসঅ্যাপে হঠাৎ করে অপরিচিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বার্তা পান, কিংবা গ্রুপে যুক্ত হন—তবে বুঝে নিন, আপনিও ঝুঁকির মধ্যে আছেন। সঠিক সময়ে সতর্ক না হলে হতে পারে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার। তাই এখনই আপনার হোয়াটসঅ্যাপ সেটিংস চেক করে সুরক্ষা ফিচারগুলো সক্রিয় করুন।

রাকিব

×