ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব নিষিদ্ধ করলো স্পেনের এক শহর!

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৮ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১১:৩৭, ৮ আগস্ট ২০২৫

মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব নিষিদ্ধ করলো স্পেনের এক শহর!

ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে চিকিৎসার জন্য স্পেনে পৌঁছেছে ১৩ জন শিশু। উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করবে স্পেন সরকার। গাজা যুদ্ধের বর্বরতার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে দেশটি। গত বছরের মে মাসে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস। মিত্রদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।

 

 

 

স্পেনে বসবাসরত মুসলিমদের সমর্থনে এর আগেও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ১৯৯২ সালে ইসলামিক কমিশন অফ স্পেনের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে দেশটি। এর মাধ্যমে ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা, হালাল রেস্টুরেন্ট সেবা এবং মসজিদের ইমামদের সরকারি স্বীকৃতি পায় মুসলিমরা। কিছু সরকারি স্কুলে ইসলামিক শিক্ষার সুযোগও চালু রয়েছে।

তবুও মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব স্পেনের একাংশ জনগণের মধ্যে রয়ে গেছে। এরই প্রতিফলন দেখা গেল দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মুরসিয়া শহরের জুমিলায়। সেখানে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো ইসলামিক ধর্মীয় উৎসব জনসাধারণের সরকারি স্থানে উদযাপন নিষিদ্ধ করেছে রক্ষণশীল পিপলস পার্টি। ৬ আগস্ট যুক্তরাজ্যভিত্তিক গার্ডিয়ান জানায়, স্পেনে এটাই প্রথমবারের মতো এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শহরের ক্রীড়া ও জনকল্যাণমূলক কেন্দ্রগুলো ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক কোনো কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে না, কারণ তা “স্প্যানিশ পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

শুরুর প্রস্তাবে সরাসরি ইসলামিক উৎসব নিষিদ্ধের কথা থাকলেও পরে সংশোধনী এনে শুধুমাত্র পৌর কর্তৃপক্ষ আয়োজিত কার্যক্রমের জন্য স্থাপনাগুলোর ব্যবহার অনুমোদিত হয়। চরম ডানপন্থী দল ভক্স ভোটদান থেকে বিরত থাকলেও সমর্থন জানায় এবং এক বিবৃতিতে জানায়—“স্পেন খ্রিস্টানদের ভূমি ছিল, আছে এবং থাকবে।”

 

 

এ সিদ্ধান্তে আতঙ্কিত স্পেনে বসবাসরত মুসলিমরা। ইসলামিক সংগঠনগুলোর ফেডারেশনের সভাপতি মনির বেনজিলুইন আন্দালুসি আজহারী একে ইসলামবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “এটা কেবল মুসলিমদের লক্ষ্য করে করা হচ্ছে; অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবের উপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসেনি। গত ৩০ বছরে কখনো ভয় পাইনি, কিন্তু এখন ভয় পাচ্ছি।”

পিউ রিসার্চ সেন্টারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমানে স্পেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩% মুসলিম, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১০% এ পৌঁছাতে পারে। গত ৩০ বছরে এই সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা স্প্যানিশদের একাংশ মেনে নিতে পারছে না। গত বছরের জুলাইয়ে “স্পেন খ্রিস্টানদের, মুসলিমদের নয়” স্লোগানে মিছিলও হয়েছিল।

 

 

 

ইতিহাস অনুযায়ী, মুসলিমরা প্রায় ৭০০ বছর ধরে স্পেনের বিভিন্ন অংশে শাসন করেছে। ১৪৯২ সালে খ্রিস্টানরা দেশটি পুনর্দখল করার পর মুসলিমদের ওপর ব্যাপক ধর্মীয় নিপীড়ন চালানো হয়। প্রথমে ধর্ম পালনের অধিকার থাকলেও পরে তা বাতিল করা হয় এবং তাদের ধর্মান্তর অথবা দেশত্যাগ—এই দুই বিকল্পের একটিতে বাধ্য করা হয়।

ছামিয়া

×