ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

কলকাতায় আওয়ামী লীগের গোপন ‘পার্টি অফিস’, চলছে কার্যক্রম

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ৮ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৩:৪৯, ৮ আগস্ট ২০২৫

কলকাতায় আওয়ামী লীগের গোপন ‘পার্টি অফিস’, চলছে কার্যক্রম

কলকাতার লাজেপাড়া এলাকার একটি বাণিজ্যিক ভবনের আটতলায় অফিস খুলে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যদিও এটি দেখতে সাধারণ একটি অফিসের মতো, এখানে নিয়মিতভাবে দলীয় নেতাকর্মীরা বৈঠক করেন। তবে অফিসের ভেতরে কিংবা বাইরে কোথাও দলের নাম, সাইনবোর্ড বা কোনো নেতার ছবি নেই—এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই এমনভাবে রাখা হয়েছে যাতে কেউ সন্দেহ না করে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রথম দিকে নিজেদের বাসায় ছোট আকারে বৈঠক করতেন। বড় বৈঠকের জন্য কখনো রেস্তোরাঁ, কখনো ব্যাঙ্কোয়েট হল ভাড়া নেওয়া হতো। পরবর্তীতে একটি নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন অনুভব করে তারা কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ভবনে এই অফিস স্থাপন করেন।

এই অফিসে একসঙ্গে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী বৈঠক করতে পারেন। তবে ছোটখাটো আলোচনা অনেক সময় নেতাদের বাসাতেই হয়। বড় আকারের সভার জন্য এখনও বিভিন্ন হল ভাড়া নিতে হচ্ছে।

বর্তমানে কলকাতা এবং তার আশেপাশে অবস্থান করছেন প্রায় ২০০-এর বেশি আওয়ামী লীগ নেতা এবং দলীয় সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। কেউ এককভাবে ফ্ল্যাটে থাকছেন, কেউবা আবার ভাগাভাগি করে বসবাস করছেন। অনেকের পরিবার মাঝে মাঝে দেখা করতে আসেন। ভারতে অবস্থানরত নেতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি না পেলেও তাদের উপস্থিতি এখন গোছানো এবং সংগঠিত।

এই গোপন অফিসে কোনো নির্দিষ্ট সময় ধরে কাজ চলে না। প্রয়োজন অনুসারে নেতারা আসেন এবং দলীয় বৈঠক, পরিকল্পনা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দলীয় সূত্র বলছে, এই ধরনের অফিস পরিচালনায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া তা সম্ভব নয়।

গত এক বছরে দলটি ভারতে থেকেই নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লি সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। কলকাতার নেতারা তার সঙ্গে নিয়মিত ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত হন। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভাও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়।

ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভার্চুয়াল আলোচনা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তবে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু নেতার ভারতে অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—যখন দেশে দলের কর্মীরা দমন-পীড়নের মুখে রয়েছেন, তখন শীর্ষ নেতারা কেন বিদেশে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্যরা বলছেন, ভারতের মাটিতে দলীয় কার্যক্রম চালানো একধরনের রাজনৈতিক কৌশল ও নিরাপদ অবস্থান তৈরি করার প্রয়াস। বিভিন্ন দেশেই রাজনৈতিক দলগুলো এমন ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

দলীয় সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ সভাপতি সাদ্দাম হুসেইনও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ছাত্রলীগের অনেক কর্মী শিক্ষাজীবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না, নানা বাধার মুখে পড়ছেন।

দলের খরচ চালাতে দেশ ও বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ভারতে থাকা নেতারা তাদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। ঢাকায় যারা বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন, তারা এখন গণপরিবহন ব্যবহার করছেন, একসঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকছেন এবং মিলেমিশে খরচ ভাগ করে নিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের জানিয়েছেন, রাজনৈতিক সংগ্রাম কখন শুরু হবে তা নির্ধারণ করে বলা যায় না, তবে সংগ্রাম ছাড়া উপায়ও নেই।

সূত্র: বিবিসি

সজিব

আরো পড়ুন  

×