
ছবিঃ সংগৃহীত
ম্যাগনেসিয়াম—শরীরের জন্য এক অনন্য প্রয়োজনীয় খনিজ, যা স্নায়ু ও পেশির কাজ, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবুও, প্রায় অর্ধেক আমেরিকান তাদের খাদ্যাভ্যাসে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম পাচ্ছেন না। এর ফলে হৃদরোগ, উদ্বেগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে। সাধারণত শাকসবজি, ডাল, বাদাম, গোটা শস্য থেকে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। তবে কিছু পানীয়ও ম্যাগনেসিয়ামের দারুণ উৎস হতে পারে।
এখানে এমন ৯টি পানীয়ের কথা বলা হলো, যা শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী—
১. মিনারেল ওয়াটার
প্রতি কাপ প্রায় ৩৭.৫ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম।
প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো খনিজে সমৃদ্ধ। শরীর সহজে শোষণ করতে পারে বলে এগুলো পান করা খুব উপকারী। চাইলে সরাসরি পান করতে পারেন অথবা সামান্য ফলের রস মিশিয়ে স্বাদ ও পুষ্টি বাড়িয়ে নিতে পারেন।
২. সয়া দুধ
প্রতি কাপ ৬০ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম।
প্রোটিনসমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ দুধের মধ্যে অন্যতম। এতে ম্যাগনেসিয়ামের পাশাপাশি আয়রন ও পটাশিয়ামও থাকে। অনেক ব্র্যান্ডে ভিটামিন ডি ও বি১২-ও যোগ করা হয়। রান্না, বেকিং বা সরাসরি পান—সব ক্ষেত্রেই মানানসই।
৩. প্রুন জুস (শুকনো বরইয়ের রস)
প্রতি কাপ ৩৪.৭ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম।
কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী এই জুসে ভিটামিন সি ও পটাশিয়ামও থাকে। সরাসরি পান করতে পারেন বা অ্যাভোকাডো ও কেল শাক দিয়ে স্মুদি বানাতে পারেন।
৪. কাকাও পাউডার দিয়ে তৈরি হট কোকো
২ টেবিল চামচ কাকাও পাউডারে ৮০ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম।
কোকোও পাউডার প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ম্যাগনেসিয়ামের উৎস। দুধ বা উদ্ভিজ্জ দুধে মিশিয়ে গরম কাকাও বানাতে পারেন। সামান্য দারচিনি ও প্রাকৃতিক মিষ্টি যোগ করলে স্বাদ বাড়বে।
৫. গ্রিন স্মুদি
অ্যাভোকাডো ও পালং শাক দিয়ে তৈরি এক কাপ স্মুদিতে প্রায় ৭৬.৬ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম।
পালং শাক ও অ্যাভোকাডোর পাশাপাশি ফল ও প্রোটিন পাউডার মিশিয়ে নিলে পুষ্টিগুণ দ্বিগুণ হয়।
৬. কেফির
প্রতি কাপ ২৯.২ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম।
প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ এই টক-মিষ্টি পানীয় হজমে সহায়ক, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে ও হাড়ের জন্য ভালো। সরাসরি পান বা স্মুদিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৭. হেম্প দুধ
প্রতি কাপ ৫০.৪ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ এই উদ্ভিজ্জ দুধ হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো। কফি, চা, স্মুদি, সিরিয়াল—সবখানেই ব্যবহার করা যায়।
৮. নারকেলের পানি
প্রতি কাপ ৬০ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম।
পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটও থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে। গরমে ঠান্ডা নারকেলের পানি সতেজতার পাশাপাশি খনিজের ঘাটতিও পূরণ করে।
৯. নারকেলের দুধ
প্রতি কাপ ১০৪ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম—প্রায় এক-চতুর্থাংশ দৈনিক চাহিদা।
লো-কার্ব ডায়েটের জন্য উপযোগী। কফি, লাটে, হট চকলেট, স্মুদি বা সিরিয়ালে ব্যবহার করতে পারেন।
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণ কী?
অবসাদ, বমিভাব, ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা ইত্যাদি। দীর্ঘমেয়াদে খিঁচুনি ও অনিয়মিত হার্টবিট হতে পারে।
খাবার থেকে নেওয়া ভালো নাকি সাপ্লিমেন্ট?
খাবার থেকেই পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া সম্ভব, তবে প্রয়োজন হলে সাপ্লিমেন্টও নেওয়া যেতে পারে।
পানীয় থেকে বেশি ম্যাগনেসিয়াম নেওয়া কি ক্ষতিকর?
সাধারণ পানীয় থেকে অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম নেওয়া খুবই বিরল, তবে বিশেষভাবে উচ্চ ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত ওষুধ বা ল্যাক্সেটিভে সতর্ক থাকতে হবে।
পালং শাক, অ্যাভোকাডো, বাদাম, ডাল ইত্যাদির মতো খাবারের পাশাপাশি মিনারেল ওয়াটার, সয়া দুধ, নারকেলের দুধ, প্রুন জুস, গ্রিন স্মুদি ও কাকাও পানীয় আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করলে সহজেই ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে—স্বাস্থ্যও থাকবে সজীব ও প্রাণবন্ত।
মারিয়া