ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

‘নখ খাওয়া’ শুধু বাজে অভ্যাস নয়—জীবননাশক সংক্রমণেও পরিণত হতে পারে!

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ৮ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৯, ৮ আগস্ট ২০২৫

‘নখ খাওয়া’ শুধু বাজে অভ্যাস নয়—জীবননাশক সংক্রমণেও পরিণত হতে পারে!

ছবিঃ সংগৃহীত

নখ কামড়ানোর অভ্যাস, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অনিকোফ্যাজিয়া বলা হয়, বিশ্বজুড়ে বহু মানুষের মাঝে দেখা যায়। সাধারণত শিশু বয়সে মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা একঘেয়েমি থেকে শুরু হওয়া এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

অনেকে একে নিছক বাজে অভ্যাস মনে করলেও, এটি চামড়া, দাঁত ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি এই অভ্যাসের ফলে সেপসিসের মতো প্রাণঘাতী সংক্রমণও হতে পারে।

কীভাবে নখ কামড়ানো থেকে সেপসিস হতে পারে?

সেপসিস হলো একটি মারাত্মক শারীরিক অবস্থা, যেখানে শরীর কোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এতে পুরো শরীরে প্রদাহ ছড়িয়ে পড়ে, যা অঙ্গ বিকলতা বা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। সেপসিসের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা অপরিহার্য।

নখ কামড়ানোর ফলে নখের আশপাশের ত্বকে ক্ষত বা ছোট ছোট ফাটা জায়গা তৈরি হয়। এসব ক্ষতের মাধ্যমে শরীরে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। এই জীবাণুগুলো হাতে বা মুখে স্বাভাবিকভাবেই থেকে যায়, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যদি এই সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা সেপসিসের মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে।

শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি

  • নখ ও ত্বকের ক্ষতি: নিয়মিত নখ কামড়ালে কিউটিকল ও নখের শেকড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে হ্যাংনেইল, নখ বিকৃতি এবং ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (যেমন paronychia) দেখা দিতে পারে।

  • দাঁতের সমস্যা: নখ কামড়ানোর ফলে দাঁত ভেঙে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া বা সোজা না থাকা, এনামেল ক্ষয়, মাড়ি সরে যাওয়া, চোয়ালের ব্যথা এমনকি টিএমজে (TMJ) সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

  • সংক্রমণের ঝুঁকি: নখ কামড়ালে হাতে থাকা জীবাণু সরাসরি মুখে প্রবেশ করে, ফলে ঠান্ডা, ফ্লু, পেটের সমস্যা ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে। দুর্লভ কিন্তু মারাত্মক সংক্রমণগুলোর মধ্যে রয়েছে সেপসিস।

  • হজমজনিত সমস্যা: অনিচ্ছাকৃতভাবে নখের টুকরা গিলে ফেললে হালকা হজমের গোলমাল থেকে শুরু করে বিরল ক্ষেত্রে অন্ত্রের ব্লকেজও হতে পারে।

মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

নখ কামড়ানোকে body-focused repetitive behavior (BFRB) বা শরীর-কেন্দ্রিক পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণের আওতায় ধরা হয়। এর মধ্যে চুল ছেঁড়া, ত্বক খোঁচানোর মতো আচরণও পড়ে।
যারা দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাসে ভোগেন, তারা প্রায়ই লজ্জা, মানসিক অস্বস্তি ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হন।

একসময় ধারণা ছিল, নখ কামড়ানোতে অ্যালার্জি কমে!

পুরোনো কিছু গবেষণায় বলা হয়েছিল, শিশুকালে নখ কামড়ালে শরীর কিছু জীবাণুর সঙ্গে পরিচিত হয়ে অ্যালার্জির প্রবণতা কমে যেতে পারে। তবে আধুনিক চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা এই অভ্যাসকে সম্পূর্ণরূপে নিরুৎসাহিত করেন, কারণ এর ঝুঁকি অনেক বেশি।

কীভাবে এই অভ্যাস ত্যাগ করবেন?

  • ট্রিগার শনাক্ত করুন: কোন সময়গুলোতে বা কোন পরিস্থিতিতে নখ কামড়ান তা খেয়াল করুন।

  • নখ ছোট ও পরিপাটি রাখুন: সুন্দরভাবে ছাঁটা নখ কামড়ানোর প্রবণতা কমায়।

  • বিকল্প ব্যবহার করুন: হাতে বা মুখে ব্যস্ত রাখার জন্য স্ট্রেস বল, চুইংগাম বা ফিজেট টয় ব্যবহার করতে পারেন।

  • ধীরে ধীরে কমান: একসঙ্গে পুরোটা বন্ধ না করে একেকটি আঙুল থেকে অভ্যাস ত্যাগের চেষ্টা করুন।

  • প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন: যারা দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাসে ভুগছেন, তারা কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) বা হ্যাবিট রিভার্সাল ট্রেনিং-এর মাধ্যমে উপকার পেতে পারেন।

উপসংহার:
নখ কামড়ানোকে তুচ্ছ মনে করলেও, এর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব অত্যন্ত জটিল হতে পারে। এটি শুধু সৌন্দর্যহানিকর নয়, বরং জীবাণুবাহিত মারাত্মক রোগের দ্বারও খুলে দেয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই অভ্যাস ত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/why-nail-biting-is-more-than-just-a-bad-habit-it-may-cause-serious-infections-like-sepsis/articleshow/123185276.cms

ইমরান

×