
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুসের ক্যান্সার। পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই এটি মৃত্যুহার সর্বোচ্চ ক্যান্সার হিসেবে পরিচিত। হিন্দুস্তান টাইমস লাইফস্টাইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুম্বাই সেন্ট্রালস্থ ওকহার্ড হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জিকাল অনকোলজিস্ট ডা. তানভীর মজীদ ফুসফুসের ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরন ও উপসর্গ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন।
ফুসফুসের ক্যান্সার কী?
ডা. মজীদ বলেন, “ফুসফুসের ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হিস্টোলজিকাল ক্যান্সারের সমষ্টি হলেও একত্রে ফুসফুসের ক্যান্সার হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। এসব ক্যান্সারের বৃদ্ধি, ছড়িয়ে পড়া এবং চিকিৎসার পদ্ধতি আলাদা। মূলত দুটি প্রধান শ্রেণিতে ফুসফুসের ক্যান্সারকে ভাগ করা হয়—নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (NSCLC) এবং স্মল সেল লাং ক্যান্সার (SCLC)। এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে মাইক্রোস্কোপে কোষের চেহারা দেখে।”
নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (NSCLC) কী?
এই ধরনের ক্যান্সার ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রায় ৮০–৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়। এটি তুলনামূলকভাবে ধীরে বৃদ্ধি পায় ও ছড়ায়। NSCLC-র তিনটি উপপ্রকার রয়েছে: অ্যাডেনোকার্সিনোমা, স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা এবং লার্জ সেল কার্সিনোমা।
“ধূমপান এই তিনটিরই সাধারণ ঝুঁকি উপাদান হলেও অ্যাডেনোকার্সিনোমা বিশেষ করে নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমার ক্ষেত্রেও অন্যান্য কারণ, যেমন রেডন গ্যাস ও অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। লার্জ সেল কার্সিনোমা ফুসফুসের যেকোনো অংশে হতে পারে এবং এটি তুলনামূলকভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে,” জানান ডা. মজীদ।
স্মল সেল লাং ক্যান্সার (SCLC) কী?
এই ধরনের ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে কম, প্রায় ১০–১৫ শতাংশ রোগীর মধ্যে দেখা যায়। “এই ক্যান্সারের প্রধান কারণ ধূমপান এবং এটি অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি ও শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার জন্য কুখ্যাত, বিশেষ করে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি ও মস্তিষ্কে। এজন্য এটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা কঠিন এবং চিকিৎসাও জটিল হয়। সাধারণত কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের সমন্বিত চিকিৎসা প্রয়োজন হয়,” বলেন ডা. মজীদ।
অন্যান্য ধরনের ফুসফুসের ক্যান্সার
ডা. মজীদ আরও বলেন, “ফুসফুসে অন্যান্য দুর্লভ ক্যান্সারও হতে পারে, যেমন নিউরোএন্ডোক্রাইন ক্যান্সার (NEC) এবং ব্রঙ্কিয়াল কার্সিনয়েডস। কার্সিনয়েড টিউমারগুলো ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণত ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে এগুলো প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ভালোভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব।”
চিকিৎসার পদ্ধতিতে পরিবর্তন
“ফুসফুসের ক্যান্সারের ধরন নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটাই চিকিৎসার পথ নির্ধারণ করে এবং রোগীর জীবনমান ও বেঁচে থাকার হার প্রভাবিত করে। মলিকুলার বায়োলজির উন্নয়ন, বিভিন্ন জিনগত মার্কার এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (NGS) এর মাধ্যমে এখন উন্নত পর্যায়ের রোগীদের জন্যও টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপির মতো নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রদান সম্ভব,” জানান তিনি।
লক্ষণ ও সচেতনতাই প্রথম প্রতিরক্ষা
ডা. মজীদ বলেন, “ফুসফুসের ক্যান্সারের ধরন জানার পাশাপাশি উপসর্গগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: দীর্ঘস্থায়ী কাশি, বুকব্যথা, হঠাৎ ওজন হ্রাস, ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্ট। এই উপসর্গগুলো অবহেলা করা উচিত নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার ফল অনেক ভালো হয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ফুসফুসের ক্যান্সার একটি আগ্রাসী রোগ, যার চিকিৎসা রোগের ধরন ও বিভিন্ন মার্কারের ওপর নির্ভর করে। সচেতনতা ও এলডিসিটি (Low-Dose CT Scan)-র মতো স্ক্রিনিং পদ্ধতি রোগ শনাক্তকরণে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।”
নোভা