
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
কেশবপুরে জলাবদ্ধতায় পৌর সভার চার হাজার পরিবারের পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ডের সবগুলো জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এরমধ্যে এক, চার, পাঁচ, ছয় ও সাত নং ওয়ার্ডের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। সড়কের পাশে টং ঘর বানিয়ে আশ্রয় নেওয়া দুর্গত ৭০ পরিবারের মানুষের মাঝে বৃহস্পতিবার রাতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন।
বৃষ্টির পানি নদী ও খাল দিয়ে বের হতে না পেরে কেশবপুর পৌর সভাসহ নীচু এলায়কায় মারাতœক জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে পানিতে মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ফলে শত শত পরিবারকে ঘর বাড়ি ছেড়ে সড়কের পাশেসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে যশোর-চুকনগর সড়কের কেশবপুরের মধ্যকুল এলাকায় টং ঘর বানিয়ে আশ্রয় নেওয়া এমন ৭০টি পরিবারের মাঝে নির্বাহী অফিসার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। ত্রাণ সামগ্রী মধ্যে চাল, ডাল, লবণ, চিনি, তেল, মরিচ, হলুদ ও ধনিয়া গুড়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে উক্ত ত্রাণ সামগ্রীর একটি প্যাকেট তিনি কেন্দ্রের প্রতিটি টং ঘরে গিয়ে তাদের হাতে তুলে দেন।
চলতি বছর বৃষ্টি মৌসুমে টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর উপচে পড়া পানি ঢুকে কেশবপুর পৌরসভার সাত হাজার পরিবারের মধ্যে প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জলাবদ্ধতার পানি বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়ায় বাধ্য হয়ে অসংখ্য পরিবারসহ অসহায় মানুষগুলো সড়কের পাশে টং ঘর বানিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিপাকে পড়েছে হাজারো মানুষ। জলাবদ্ধতার পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকায় আরও পরিবার পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পৌরসভার সাহাপাড়া, কলেজপাড়া, আলতাপোল, ভোগতি, মধ্যকুল, শহরের মাছ বাজার, তরকারি বাজার, গম বাজার, ডিগ্রি কলেজ, কেশবপুর থানসহ অধিকাংশ এলাকায় হাঁটু পানি বা কোন কোন জায়গায় তার চেয়ে বেশী পানিতে তলিয়ে গেছে। কাঁচা বাজার অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। জলাবদ্ধ এই পানি খাল ও নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। কারণ সমতল ভূমির চেয়ে নদীগুলোর তলায় পলি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানি বের হতে পারছে না। ফলে প্রতিবছরই কেশবপুরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে মাঠ ঘাট, বসত বাড়ি, হাটবাজার তলিয়ে দিচ্ছে।
পানিবন্দি ভোগতি নোনাডাঙ্গার আজহারুল ইসলাম জানান, পানির ভেতর দিয়ে অনেক কষ্টে চলাফেরা করতে হচ্ছে। দ্রুত পানি সরানোর ব্যবস্থা না করা হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে। মধ্যকুল খানপাড়ার মতিয়ার রহমান জানান, তার বসত ঘরে হাঁটু পানি হওয়ায় পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে। আলতাপোল এলাকার সাবেক পৌর কাউন্সিলর কুতুব উদ্দিন বিশ্বাস জানান, পানিতে এলাকা তলিয়ে থাকায় মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
পৌর সভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফজল মো. এনামুল হক জানান, পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ডই জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এরমধ্যে এক, চার, পাঁচ, ছয় ও সাত নং ওয়ার্ডের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার লোকজনকে বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে। আজ পর্যন্ত পৌর সভার সাত হাজার পরিবারের মধ্যে তিন হারাজন নয় শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ যাবত তাদের জন্য কোন ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরও পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মিরাজ খান