
ছবি: সংগৃহীত
২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪৯/১২৪ এর রেজুলেশনে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর ০৯ আগস্ট আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। যদিও বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদ মোতাবেক বাংলাদেশে বসবাসকারী বাঙালি ব্যতিত অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীকে উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তথাপি, প্রতিবছর বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সম্প্রদায়সহ সমতলের উপজাতীয়রাও আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে নানান আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বা উপজাতীয়রা আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অযাচিত বিতর্কের সৃষ্টি করছে। সবচেয়ে বড় পরিতাপের বিষয় কিছু বাঙালি বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতারা না বুঝে অথবা বুঝে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উপজাতীয়দের আদিবাসী দাবীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করছেন। আর দেশের সাধারণ মানুষের বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারনাই নেই। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন আদিবাসী ও উপজাতি সমার্থক শব্দ। কিছু মানুষ আদিবাসী শব্দটিকে উপজাতি শব্দের চেয়ে সমার্থক স্মার্ট শব্দ মনে করেন যা একেবারেই ঠিক নয়।
অক্সফোর্ড ডিকশেনারি অনুযায়ী Indigenous বা আদিবাসী শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে "Belonging to a particular place rather than coming to it from somewhere else" যার অনুবাদ করলে দাড়ায় "অন্য কোথাও থেকে আসার পরিবর্তে ঐতিহাসিকভাবে একটি নির্দিষ্ট স্থানের বাসিন্দা হওয়া।" বাংলাদেশের কোন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষই বাংলাদেশের আদি বাসিন্দা নন। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে চাকমারা। আমরা প্রথমেই তাদের মূল খোঁজার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার জন্য আমরা কোন বাঙালি ঐতিহাসিকের ভাষ্য গ্রহণ না করে চাকমা ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিদেশি ঐতিহাসিকদের মতামত গ্রহণ করতে পারি।
সুগত চাকমা তার 'বাংলাদেশের উপজাতি ও আদিবাসীদের সমাজ, সংস্কৃতি ও আচার ব্যবহার' নামক গ্রন্থে লেখেন, "জনশ্রুতি মতে চাকমাদের আদি বাসস্থানের নাম চম্পকনগর। সেখানে একজন রাজার দুটি ছেলে ছিল। বড় রাজপুত্রের নাম বিজয়গিরি। যুবরাজ বিজয়গিরি পিতার জীবদ্দশায় দক্ষিণ দিকে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম, আরাকান ও 'সাপ্রেকুল' জয় করেন। কিন্তু অভিযান শেষে ফিরার পথে কালাবাঘা নামক প্রদেশে এসে জানতে পারেন যে, তাঁর অবর্তমানে তাঁর বৃদ্ধ পিতার মৃত্যু হয়েছে এবং তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা চম্পকনগরের সিংহাসনে আরোহণ করেছেন। এই সংবাদ পেয়ে মনের দুঃখে তিনি আর স্বদেশে ফিরে গেলেন না। তিনি তার অনুগত সৈন্যদের নিয়ে নতুন বিজিত রাজ্য সাপ্রেকূলে রাজত্ব করতে গেলেন। সেখানে তিনি একজন উচ্চবংশীয় রমণীর পানি গ্রহণ করেন এবং তার অনুগত সৈন্যদেরকে স্থানীয় রমণী বিয়ে করার অনুমতি দেন। কালে তাদের সাথে চম্পকনগরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় এবং চম্পকনগর ও তার বাসিন্দারা কালের অন্ধকারে হারিয়ে যায়। চাকমাদের বিশ্বাস, তারা রাজা বিজয়গিরির আরাকান বিজয়ী সৈন্যদেরই বংশধর। চাকমাদের এই জনশ্রুতিটি 'গেংখুলী' নামক চারণ কবিরা উভগীত এর সুরে গ্রামদেশে কোন নির্জন স্থান বেছে নিয়ে গেয়ে থাকে। এ বিষয়ে একটি পালাগান আছে- এর নাম 'চাদিগাঙ ছারা'।"
লেখক সুপ্রিয় তালুকদার তার 'চম্পকনগর সন্ধানে বিবর্তনের ধারায় চাকমা জাতি' গ্রন্থে লেখেন, "ফ্রান্সিস বুখানন ১৭৯৮ খ্রীষ্টাব্দে দক্ষিণ পূর্ব বাংলার কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, চাকমারা তাঁকে বলেছিল যে, তারাও রোসাঙ্গ বা আরাকানের সাকদের মতোই জাতিভুক্ত; তারাও এসেছে মূলতঃ আরাকান থেকেই। ফ্রান্সিস বুখানন ১৭৯৮ খ্রীষ্টাব্দে এ অঞ্চল ভ্রমণ করেছিলেন আজ হতে ২২৭ বৎসর পূর্বে। এ অঞ্চলের তখনকার সমাজব্যবস্থা, বসতি, জীবনযাত্রা প্রণালী, ভাষা, ধর্ম, আর্থিক ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে তিনি নিজ চোখে যা দেখেছিলেন এবং স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদে যা অবগত হয়েছিলেন তাই তিনি তার ভ্রমণ কাহিনীতে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। কাজেই তার প্রদত্ত তথ্যসমূহ গবেষণা ক্ষেত্রে অনুমানের চেয়ে বেশী নির্ভরশীল ও গুরুত্বপূর্ণ।" "ভারতবর্ষের উত্তর পূর্ব সীমান্তে বসবাসরত অধিবাসীগণ ভারতের ভূমিজ সন্তান নহে বলে নৃ-তত্ত্ববিদগণ ধারণা পোষণ করেন। কাজেই চাকমাদের ক্ষেত্রেও এরূপ ধারণা ব্যতিক্রম নহে বিধায় চাকমারা মংগোলীয় জনগোষ্ঠী হিসেবে নিঃসন্দেহে ভারতের ভূমিজ সন্তান নহে।"
ব্রিটিশ প্রশাসক ও ঐতিহাসিক টি. এইচ, লুইন এর লিখিত বইয়ের অনুবাদ গ্রন্থ 'বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আদিম জনগোষ্ঠী' নামক বইয়ে লেখেন, "বর্তমানে চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাসকারী পাহাড়ী উপজাতিগুলোর একটা বড় অংশ সন্দেহাতীতভাবে দুই পুরুষ আগেই আরাকান থেকে এসেছে। তাদের ঐতিহ্য এবং চট্টগ্রাম কালেক্টরেটের নথিপত্র থেকে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। আমাদের পাহাড়ী উপজাতিগুলোর আরাকান ত্যাগের কারণেই অনেকটা ১৯২৪ ইং সালের বর্মী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। উর্বর আরাকান প্রদেশকে বৃটিশ রাজ্যে অন্তর্ভুক্তকরণের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
বর্মীদের সাথে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে আমাদের কাছে সবচেয়ে পুরাতন যে রেকর্ডপত্র আছে তার মধ্যে হলো দুটো চিঠি। এগুলোর মধ্যে একটা বার্মার রাজা এবং অপরটা আরাকানের রাজা চট্টগ্রামের প্রধানের কাছে লিখেছেন এবং আনুমানিক ২৪শে জুন, ১৭৮৭ ইং সালে পাওয়া যায়, যাতে নিম্নোক্ত কথাগুলো লেখা হয়েছে। "আরাকানের রাজার কাছ থেকে চট্টগ্রামের প্রধানের প্রতি। আমাদের রাজ্য পাঁচশত ষাটটা দেশ নিয়ে গঠিত এবং আমাদের মধ্যে সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক ছিল। অন্যান্য দেশের অধিবাসীরা আমাদের পরস্পরের দেশে স্বেচ্ছায় এবং স্বাধীনভাবে ব্যবসা করে। কিউটি নামের একজন লোক আমাদের দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে আপনার দেশে আশ্রয় নিয়েছে। অবশ্য আমি একটা বাহিনী দিয়ে তার পশ্চাতধাবন করিনি। তবে কিউটিকে ফেরত পাবার আশায় আমি এ বিষয়ে একটা বন্ধুত্বের চিঠি পাঠিয়েছিলাম। আপনি আপনার নিজের ক্ষমতা এবং অধিকৃত রাজ্যের পরিধির কথা বিবেচনা করে তাকে আমার কাছে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করেন। আমিও একটা বিশাল রাজ্যের অধিকারী। পরিণতিতে তার অবাধ্য স্বভাবের জন্য রাজার শক্তি ও প্রভাবে কিউটিকে ধ্বংস করা হয়েছে।" "ডোমকান চাকমা এবং পিকোপা লাইস মারিং এবং আরাকানের অন্যান্য অধিবাসীরা বর্তমানে পালিয়ে গেছে এবং আপনার সীমান্ত এলাকার পাহাড়গুলোর কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তারা উভয় দেশের অধিবাসীদের উপর লুণ্ঠন চালায়। অধিকন্তু তারা নাফ নদীর মোহনার একজন ইংরেজকে হত্যা করেছে এবং তার সবকিছু চুরি করে নিয়েছে। একথা শুনে তাদেরকে আটক করার জন্য আমি সেনাবাহিনীর একটা দল নিয়ে আপনার রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত এসেছিলাম। কারণ তারা তাদের দেশ ত্যাগ করেছে এবং আমার অবাধ্য হয়ে ডাকাতের পেশা অবলম্বন করেছে। তাদেরকে এবং আরাকান থেকে পলাতক অন্যান্য মগদের আশ্রয় দেয়া আপনার উচিৎ নয় এবং আমাদের বন্ধুত্ব অটুট এবং পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের রাস্তা নিরাপদ রাখার স্বার্থে তাদেরকে আপনার দেশ থেকে বিতাড়িত করে আমার কাছে ফেরত না দেন, তাহলে আমাকে সেনাবাহিনী দিয়ে তাদেরকে আপনার দেশের যে এলাকায় তারা বাস করে সেখান থেকে খুঁজে বার করতে হবে। আমি মোহাম্মদ ওয়াসেন মারফত এই চিঠি পাঠালাম। এটা পাওয়ার পর হয় মগদেরকে আপনার দেশ থেকে তাড়িয়ে দিন অথবা যদি তাদেরকে আশ্রয় দিতে চান তাহলে আমাকে অতি সত্ত্বর একটা জবাব দিন।" এই চিঠির বক্তব্য যথেষ্ট পরিষ্কার। যেমন পলাতকদের কথা বলা হয়েছে তারা স্পষ্টতই চাকমা এবং মুরং উপজাতির লোক। যারা অদ্যাবধি তাদের পূর্বপুরুষদের আরাকান থেকে পালিয়ে আসার কথা মনে গেঁথে রেখেছে। যাদের কথা বলা হয়েছে, তারা সম্ভবত গোত্র প্রধানগণ এবং বৃটিশ রাজ্য থেকে তাদের বিতাড়নে পুরো গোত্রের বহিষ্কার হিসেবে গণ্য হত। চট্টগ্রাম জেলার অধিবাসীরাই এই উপজাতিকে সাধারণভাবে চাকমা নাম দিয়েছে। এই উপজাতির বৃহত্তর এবং প্রভাবশালী অংশ এটাকে এর যথার্থ নাম বলে মেনে নিয়েছেন। এটাকে মাঝে মধ্যে সাকমা কিংবা সাক কিংবা বর্মী ভাষায় ঠেকও বানান করা হয়। এই উপজাতির একটা ক্ষুদ্র অংশকে দোংনাক বলা হয়। সুতরাং আমি এখন যে উপজাতি সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি চাকমা, সাক, ঠেক এবং দোনংনাক নামগুলো সেই উপজাতির নাম হিসেবে ধরে নেয়া যায়। তঞ্চঙ্গ্যা নামে তৃতীয় একটা গোত্রও আছে। প্রাচীন কালের কোন লিখিত নথিপাত্র তাদের কাছে নেই বলে উপজাতিটার উৎপত্তি সম্পর্কে শুধু তাদের ঐতিহ্য ও দৈহিক গঠন থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। অবশ্য তাদের মধ্যে কয়েকজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন, এটা পিতা থেকে পুত্রের কাছে পুরুষানুক্রমে মৌখিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে যে, তারা আদিকালে চাইনপাংগো বা চম্পকনগর থেকে এসেছিলেন। এই দেশের অবস্থান সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। কারো কারো মতে এটা মালাক্কার কাছে অবস্থিত। এই ধারণা অনুযায়ী তাদের উৎপত্তি মালয়ে। পক্ষান্তরে, অনেকে এই দৃঢ় মত পোষণ করেন যে, চম্পকনগর হিন্দুস্থানের উত্তর পশ্চিম প্রদেশের সুদূর উত্তরে অবস্থিত। যারা এ শেষোক্ত মত পোষণ করে তারা বলে যে, তারা চন্দ্র নামে এক ক্ষত্রিয় পরিবারের বংশধর। এই উপজাতির মুখাকৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আর্য জাতি নয়, মঙ্গোলীয় জাতিই নির্দেশ করে। অধিকন্তু, মাত্র সাম্প্রতিক কালেই তাদের মধ্য থেকে আরাকানী ভাষার ব্যবহার উঠে গেছে। এই উপজাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করে যে, তারা উচ্চ বর্ণ হিন্দু পরিবারের বংশধর।
উপরোক্ত সকল লেখকের বক্তব্য থেকেই একটি বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ট উপজাতি সম্প্রদায় চাকমারা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদি বাসিন্দা নন। পার্বত্য চট্টগ্রামে আগমনের পূর্বে চাকমাদের আদি বসতি কোথায় ছিল তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে আদি বসতি হিসেবে তিনটি স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়; মিয়ানমার, ভারত ও মালাক্কা (মালয়েশিয়া)। তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে আগমনের সময়কাল নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও তার কোনটিই ৬০০ বছরের বেশি পুরাতন নয়। চাকমাদের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলে বসবাসরত অন্যান্য সকল উপজাতি জনগোষ্ঠীই যুদ্ধ-বিগ্রহ বা অন্যান্য কারণে বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মত রাষ্ট্র হতে গত ২/৩ শতকের মধ্যে বাংলাদেশে আগমন করেছে তা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। যেহেতু তারা বাংলাদেশের আদি বাসিন্দা নন কাজেই কোন যুক্তিতেই তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বা সমতলের আদিবাসী বলার সুযোগ নেই। এখন আসা যাক যে দুটি দেশ থেকে চাকমাদের বাংলাদেশে আগমনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ভারত ও মিয়ানমারে তারা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি কিনা। ভারতে চাকমারা Scheduled Tribe বা তফসিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃত। অপরদিকে, মিয়ানমারে চাকমারা Ethnic Minority Group বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ চাকমাদের আদি বাসস্থান ভারত ও মিয়ানমারে তারা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃত নয়, তাহলে সেখান থেকে বাংলাদেশে এসে কিভাবে তারা বাংলাদেশের আদিবাসী হয়? সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যে, ভারতীয় চাকমারা তাদের নিজ দেশে নিজেদের জন্য আদিবাসী স্বীকৃতি আদায় করতে পারেনি। তথাপি, তারা বাংলাদেশের চাকমাদের জন্য আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ে সোচ্চার। মিছিল, মিটিং আর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিরলসভাবে তারা বাংলাদেশী চাকমাদের জন্য বাংলাদেশে আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকে। সাম্প্রতিককালে কিছু উপজাতি ব্যক্তিবর্গ আদিবাসী বিতর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন আর তা হচ্ছে আদিবাসী হওয়ার জন্য কোন অঞ্চলের আদিবাসী হওয়া অত্যাবশ্যক নয়, দেশের মূল জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে ভিন্নতর জাতিগত বৈশিষ্ট, ভাষা ও সংস্কৃতি থাকলেই চলবে। কিছু মতলববাজ বুদ্ধিজীবী ও বাম নেতারাও এই থিওরিকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। পুরো প্রক্রিয়াটির উদ্দেশ্য মোটেই সরল নয়। রাষ্ট্রের ভিতর রাষ্ট্র তৈরীর উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি প্রচেষ্টা। আদিবাসী সংক্রান্ত বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে একটি গোষ্ঠী রাষ্ট্রকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের হাতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে পশ্চিমা জনগোষ্ঠীর সমর্থিত ও পছন্দনীয় আদিবাসী ইস্যু।
বাংলাদেশের উপজাতিরা আদিবাসী স্বীকৃতি পেলে কী সমস্যার উদ্ভব হবে তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন বোধ করছিনা। কারণ আমি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হই তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলে আমি কী কী সুবিধা/অসুবিধা ভোগ করবো তা আমার জন্য অপ্রয়োজনীয় বিষয়। একইভাবে উপজাতীয়রা যেহেতু আদিবাসী নয় কাজেই তাদেরকে আদিবাসী কল্পনায় এনে আলাপ-আলোচনা করাও বাহুল্যতা মাত্র। উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পরিচিতি। এই পরিচয় নিয়ে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর হীনমন্যতায় ভোগার কোন কারণ নেই। আমিতো উপজাতিকে বাঙালি বলে সম্বোধন করছিনা। কাজেই স্বীকৃত ও যথার্থ পরিচয়ে পরিচিতি পেতে বাঁধা কোথায়?
শিহাব