
ছবি: সংগৃহীত
ডায়াবেটিস এখন আর কিছু মানুষের রোগ নয়— এটি এক নীরব মহামারি, যা ধীরে ধীরে শক্তি, ঘুম, মন-মেজাজ এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিতে ইনসুলিন ও ওষুধ দিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, কিন্তু প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা আয়ুর্বেদ এই সমস্যাকে দেখে আরও গভীরভাবে।
আয়ুর্বেদ মতে, ডায়াবেটিসকে বলা হয় "মধুমেহ", যার অর্থ "মিষ্টি মূত্র"। এটি কেবল রক্তের শর্করার সমস্যাই নয়, বরং শরীর ও মনের সামগ্রিক ভারসাম্যহীনতার একটি চিহ্ন। আয়ুর্বেদে মনে করা হয়, শরীরের তিনটি দোষ—ভাত, পিত্ত ও কফ যখন ভারসাম্য হারায়, তখন নানা রোগের জন্ম হয়, যার একটি হলো মধুমেহ।
আয়ুর্বেদে বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিছু ভেষজ উপাদান, যেগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে পরিচিত:
-
করেলা (তিত করলা): রক্তে গ্লুকোজ কমাতে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
-
জাম (কালো জাম) বীজ: খাদ্যে চিনি শোষণ কমাতে সহায়ক।
-
গুড়মার: যাকে "চিনির ধ্বংসকারী" বলা হয়, এটি মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ কমায় এবং অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা বাড়ায়।
-
বিজয়সার কাঠ: রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে উপকার মেলে।
-
ত্রিফলা: হজমশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করে।
এই ভেষজ উপাদানগুলো কেবল তখনই কার্যকর হয় যখন তা সঠিক জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মিলে যায়। যেমন—রাতে তাড়াতাড়ি খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো এবং নিয়মিত ব্যায়াম।
আয়ুর্বেদে প্রতিদিনের নিয়ম বা "দিনচর্যা" অনুসরণ করার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। যেমন:
-
সূর্যোদয়ের আগে উঠা—শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে জাগ্রত করে।
-
৩০–৪০ মিনিট যোগব্যায়াম ও প্রণায়াম—বিশেষ করে কপালভাতি ও অনুলোম-বিলোম, যা নার্ভাস সিস্টেম ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
-
খালি পেটে মেথি ভেজানো গরম পানি—রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
-
মনোযোগসহকারে নিয়মিত খাবার খাওয়া—বিনা বিভ্রান্তিতে সময়মতো খাওয়া।
সব সময় ভেষজ তৈরি করা সম্ভব না হলেও আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন—পতঞ্জলি পরম্পরাগত আয়ুর্বেদিক ওষুধ সহজলভ্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মধুনাশিনী বাটি, যা ৩০টিরও বেশি ভেষজের সংমিশ্রণে তৈরি ও রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। যদিও এটি কোনো ম্যাজিক পিল নয়, তবে সচেতন জীবনের অংশ হিসেবে এটি হতে পারে এক নির্ভরযোগ্য সহচর।
আয়ুর্বেদ কোনো তাৎক্ষণিক সমাধান নয়। এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটি জীবনপদ্ধতি। যারা নিজের শরীরের কথা শুনতে রাজি, এবং ধৈর্য নিয়ে পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত, তাদের জন্য আয়ুর্বেদ কেবল চিকিৎসা নয়, একটি পথ।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এম.কে.