
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অযত্ন, অবহেলা ও দেখভালের অভাবে চিকিৎসা সেবার মান ক্রমশ ভেঙ্গে পড়েছে। হাসপাতাল চত্বর, ঝোপঝাড় আর জঙ্গলে ছেয়ে আছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে হাসপাতাল চত্বর যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আবাসিক ভবনগুলোয় নেই বিশুদ্ধ পানির স্থায়ী ব্যবস্থা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে হাসপাতালটি যেন নিজেই রোগী হয়ে আছে। চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বহির্বিভাগে টিকিট প্রদানকারীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট দেলদুয়ার উপজেলা হাসপাতালে প্রায়ই দেখা যায় দ্বিগুণেরও বেশি রোগী। আসনের সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয় রোগীদের। অথচ পাশেই ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভবন অব্যবহৃত রয়ে গেছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ উপযুক্ত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হাসপাতালের স্টাফরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বদলি হওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. প্রবীর কুমার সরকার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দায়সারা দায়িত্ব পালন করে গেছেন। বার বার বলার পরও হাসপাতাল চত্বরের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করেননি। অযুহাত হিসেবে জানিয়েছেন বাজেট নেই।
সিনিয়র স্টাফ নার্স সাঈদা আক্তার জানান, হাসপাতালের আবাসিক ভবনে পানির সমস্যা প্রকট। বার বার বলার পরও কর্তৃপক্ষ পানির সমস্যার স্থায়ী সমাধান করেননি। এমনিতেই এ মৌসুমে ঠান্ডা-জ¦র ও ডেঙ্গু জ্বরের প্রবণতা বেড়েছে কয়েকগুণ। হাসপাতাল চত্বরের ঝোপঝাড়, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নতি ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত না করলে হাসপাতালের রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে।
টায়ফয়েটে আক্রান্ত রোগী জাহানারা বেগম বলেন, টায়ফয়েটের ইনজেকশন (অ্যান্টিবায়োটিক) ৩০ মিনিট সময় নিয়ে পুশ করার নির্দেশনা থাকলেও ৪-৫ মিনিটেই কার্যক্রম শেষ করা হয়। এতে ইনজেকশন পুশ করার সময় অস্বস্তি বোধ করেছেন বলে তিনি জানান। কর্তব্যরত নার্সকে এ বিষয়ে বলা হলেও তিনি জানান, রোগীর সংখ্যা বেশি আমাদের, এতো সময় নেই। সময়ের অজুহাতে রোগীকে ঝুঁকিতে ফেলে ইনজেকশন পুশ করা উদ্বেগের কারণ বলে মনে করেন আরেকজন রোগীর অভিভাবক। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, জরুরি বিভাগে সব সময় ১জন চিকিৎসক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসকের অনুপস্থিতিই দেখা যায় অনেক সময়। বাসা থেকে ডেকে আনার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে আবাসিক চিকিৎসক ডা. আশরাফুল আলম বলেন, হাসপাতাল চত্বরের ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়বে। তাছাড়া আশপাশে বসবাসকারীরা হাসপাতাল চত্বরকে ডাস্টবিন মনে করেন। বাসার ময়লা-আবর্জনা দেয়ালের উপর দিয়ে ঢিল ছুড়ে ফেলেন। হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক রাখতে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি প্রতিবেশিদেরও সচেতন হতে হবে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমরা আবাসিক ভবনে বসবাস করছি। দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. সাজিয়া আফরিন বলেন, আমি সবে মাত্র কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি। চিকিৎসকসহ বিভিন্ন বিভাগে জনবল সংকট রয়েছে। হাসপাতাল চত্বর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানির সংকট সব মিলিয়েই পরিবেশের নাজুক অবস্থা। চেষ্টা করছি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। ৩১ শয্যার ইনডোরে ভর্তি রোগীর সংকলন হচ্ছে না। চেষ্টা করছি পাশের নির্মিত ৫০ শয্যা হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু করতে। সর্বোপুরি জনবল সংকট দূর ও ৫০ শয্যা চালু করতে পারলে চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে।
মিরাজ খান