ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

কেন কমছে জাপানের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ৮ আগস্ট ২০২৫

কেন কমছে জাপানের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা?

ছবি: সংগৃহীত

জাপানের জনসংখ্যা গত বছর আরও ৯ লাখ ৮ হাজারের বেশি কমে গেছে, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বার্ষিক পতন হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জাপানের মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২০ মিলিয়নে।

২০০৯ সালে ১২৬.৬ মিলিয়নে পৌঁছানোর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ১৬ বছর ধরে জনসংখ্যা কমছে, যার পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা, পুরুষ প্রধান সামাজিক ব্যবস্থা, এবং অন্যান্য গভীর সামাজিক কারণ।

জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে জাপানের পেনশন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সামাজিক অবকাঠামোর ওপর চাপ বাড়ছে, যা একটি সংকটজনক বিষয় কারণ কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমছে। সরকার এই সংকট মোকাবেলায় দশক ধরে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে সন্তান জন্ম এবং গৃহনির্মাণে আর্থিক সহায়তা, পিতৃত্বকালীন ছুটির উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি।

তবে প্রতিবারই শিশু জন্মের সংখ্যা কমছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, যা জনসংখ্যার বৃদ্ধির গতি হ্রাস করছে। নতুন তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যার প্রায় ৩০% এখন প্রবীণ জনগোষ্ঠী, এবং কাজযোগ্য বয়সের মানুষের সংখ্যা ক্রমেই কমছে।

গত বছর শিশু জন্মের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৮৭,৬৮৯, যা ১৯৬৮ সাল থেকে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন, এবং মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১.৬ মিলিয়ন, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। কর্মক্ষম বয়স (১৫-৬৪ বছর) জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫৯%। এই হার বিশ্ব গড় ৬৫% এর তুলনায় কম।

সর্বোপরি, ১৯৭০-এর দশক থেকে জাপানের কম প্রজনন হার এই সংকটের মূল কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সহজে বা দ্রুত সমাধানযোগ্য নয়। এমনকি আজই যদি প্রজনন হার দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তবুও পরবর্তী কয়েক দশক জনসংখ্যা কমতে থাকবে কারণ তরুণ-প্রবীণ অনুপাত এখনো ভারসাম্যহীন।

জাপানের জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, সীমিত বাসস্থান ও কঠোর কর্মসংস্কৃতি মানুষের বিয়ে, সম্পর্ক বা সন্তানের জন্মের ইচ্ছাকে প্রভাবিত করছে। নারীরা সামাজিকভাবে এখনও পরিবারের মূল পরিচর্যাকারী হিসেবে বিবেচিত, যা তাদের কর্মজীবন ও সন্তান জন্মে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এছাড়া, একক পিতামাতার সংখ্যা জাপানে অনেক কম, যা পশ্চিমা দেশের তুলনায় পারিবারিক কাঠামোকে আরও পিতৃতান্ত্রিক করে তুলেছে। এই সমস্যাগুলো চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য পূর্ব এশীয় দেশেও দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার ঘাটতি পূরণে অধিক অভিবাসী গ্রহণ একটি সম্ভাব্য উপায় হতে পারে, যদিও জাপান ঐতিহ্যগতভাবে জাতিগতভাবে একরূপ বলে নিজেদের পরিচয় দেয় এবং অভিবাসীদের প্রতি মাঝে মাঝে বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে।

তবুও, সরকার সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল নোমাড ভিসা চালু করেছে এবং বিদেশি শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে, কারণ গত বছর বিদেশি বাসিন্দাদের সংখ্যা ১০% বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ ৩.৬ মিলিয়ন হয়েছে।

সরকারের সর্বশেষ মডেল অনুযায়ী, ২০৭০ সালের মধ্যে জাপানের জনসংখ্যা ৩০% কমে যাবে, তবে তখন জনসংখ্যা পতনের গতি কিছুটা হ্রাস পাবে মূলত আন্তর্জাতিক অভিবাসনের কারণে।

মুমু ২

×