ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

নিষেধাজ্ঞার পরও নেই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ, জেলেপল্লিতে হাহাকার

ফরহাদ হোসেন, লক্ষ্মীপুর 

প্রকাশিত: ০০:১১, ১১ মে ২০২৫

নিষেধাজ্ঞার পরও নেই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ, জেলেপল্লিতে হাহাকার

ছবি: জনকণ্ঠ

জাটকা রক্ষায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরতে নেমে হতাশ লক্ষ্মীপুরের জেলেরা। জাল ফেললেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। জালে ধরা পড়ছে ট্যাংরা, পোয়া ও পাঙাসের পোনা। মাঝে মাঝে ইলিশের পোনাও ধরা পড়ছে, যেগুলো চাপিলা বলে বিক্রি করছেন জেলেরা ও ব্যবসায়ীরা। এতে ইঞ্জিনচালিত নৌকার জ্বালানি খরচই উঠছে না বলে জানিয়েছেন তারা।

জেলেরা জানান, গত ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। পরদিন সকাল থেকেই তারা মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে নামেন। তবে ইলিশের দেখা মেলেনি। কিছু জেলের জালে দুই-একটি ছোট আকারের ইলিশ ধরা পড়লেও অধিকাংশই খালি হাতে ফিরে আসেন। ধরা পড়ছে পাঙাসের পোনা, ছোট পোয়া, ট্যাংরা ও কিছু চিংড়ি।

জানা গেছে, এবছর অভয়াশ্রম এলাকায় জাটকা সংরক্ষণের জন্য মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২৭৬টি অভিযান পরিচালনা করে। এতে ৩২টি মামলায় ৯৪ জন জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। আদায় করা হয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা। অভিযানে ২০ লাখ মিটার জাল, ৬৪টি মাছ ধরার নৌকা ও দেড় টন মাছ জব্দ করা হয়। এসব মাছ এতিমখানা ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ এবং জালগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

এছাড়া, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য ৮০ কেজি করে দুই দফায় মোট ১৬০ কেজি ভিজিএফ’র চাল বরাদ্দ থাকার কথা থাকলেও দ্বিতীয় দফার চাল এখনও পাননি তারা।

সদর উপজেলার চর রমনী এলাকার জেলে নুর আলম বলেন, “নিষেধাজ্ঞাকালে ঢালাও ভাবে মাছ শিকার হয়েছে। প্রথম দিকে প্রশাসনের নজরদারি ছিল না। শেষ দিকে কমলনগরে কিছু অভিযান হলেও রামগতি, সদর ও রায়পুর এলাকায় তেমন অভিযান হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “এখন নদীতে নেমে হতাশ হতে হচ্ছে। ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করে মাছ ধরতে গিয়ে পাওয়া যায় মাত্র ২-৩ হাজার টাকার মাছ। কয়েকজন জেলে খালি হাতেই ফিরে এসেছেন।”

কমলনগরের মতিরহাট এলাকার জেলে মনির মাঝি বলেন, “জেলেরা অন্য কাজ জানে না। নিষেধাজ্ঞার সময় ধারদেনা করে সংসার চালিয়েছি। এখন মাছ না পেয়ে ঋণ শোধ করতে পারছি না। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি।”

মতিরহাট মাছ ঘাটের আড়তদার মো. স্বপন বলেন, “অন্য বছর এই সময়ে মাছ ঘাটে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। এখন নীরবতা। কেউ কেউ মাছ পেলেও সেগুলো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।”

অভিযোগ রয়েছে, এবার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও মাছ শিকারে নিয়োজিত ছিলেন। ফলে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

তবে অভিযান শতভাগ সফল দাবি করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, “জাটকা পাওয়া যায় এমন এলাকায় আমাদের অভিযান কঠোর ছিল। বিশাল নদীতে নজরদারির জন্য লোকবল সংকট রয়েছে। তারপরও আমরা শতভাগ সফল হয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “নদীতে এখন পানি বেশি ও আবহাওয়াও খারাপ। খুব শিগগিরই জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরতে পারবেন বলে আশা করছি।” তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় দফার চাল এখনো দেওয়া হয়নি। বরাদ্দ আসেনি, তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শহীদ

×